Category Archives: Life History

এক নজরে অভিনেত্রী পারভিন সুলতানা দিতি


  • নাম: পারভীন সুলতানা দিতি
  • ডাক নাম: দিতি
  • বাবা: আবুল হোসেন
  • মা: নূরজাহান বেগম
  • জন্মতারিখ: ৩১ মার্চ ১৯৬৫
  • জন্মস্থান: নারায়ণগঞ্জ
  • কলেজ: ইডেন কলেজ
  • স্বামী: প্রথম- সোহেল চৌধুরী ও দ্বিতীয়- ইলিয়াস কাঞ্চন
  • সন্তান: মেয়ে লামিয়া চৌধুরী ও ছেলে দীপ্ত চৌধুরী
  • প্রথম টিভি নাটকে অভিনয়: লাইলী মজনু
  • প্রথম অ্যালবাম: তোমার ও চোখে
  • প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয়: ডাক দিয়ে যাই [মুক্তি পায়নি]
  • মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি: আমিই ওস্তাদ [১৯৮৪]

     

    উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: ‘হীরামতি’, ‘দুই জীবন’, ‘ভাই বন্ধু’, ‘উছিলা’, ‘লেডি ইন্সপেক্টর’, ‘খুনের বদলা’, ‘আজকের হাঙ্গামা’, ‘স্নেহের প্রতিদান’, ‘শেষ উপহার’, ‘চরম আঘাত’, ‘স্বামী-স্ত্রী’, ‘অপরাধী’, ‘কালিয়া’, ‘কাল সকালে’, ‘মেঘের কোলে রোদ’, ‘আকাশছোঁয়া ভালোবাসা’, ‘মুক্তি’, ‘কঠিন প্রতিশোধ’, ‘জোনাকির আলো’, ‘তবুও ভালোবাসি’, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’, ‘মাটির ঠিকানা’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ ইত্যাদি।

    জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার: স্বামী-স্ত্রী

    মৃত্যু: ২০ মার্চ ২০১৬

     

Professors Publications Limited's photo.


পরমাণুবাদের জনক জন ডালটন এর ছোট্ট জীবন কাহিনী

প্রাচীনকালে ভারতীয় দার্শনিক মহর্ষি কণাদ ‘কণাবাদ’ তথ্য পরমাণুবাদ প্রথম প্রচার করেছিলেন। তিনি ধরে নিয়েছিলেন, প্রত্যেকটি পদার্থ অতি সূক্ষ সূক্ষ অবিভাজ্য কণা দ্বারা গঠিত। গ্রিক ডিমোক্রিটাসও ওই একই মত পোষণ করেছিলেন। তবুও তাদের মতকে ঠিক ঠিক বিজ্ঞানসম্মত বলা চলে না। কারণ এরা মূলত ছিলেন দার্শনিক যদিচ দর্শন থেকেই বিজ্ঞানের উৎপত্তি তথাপি কণাদ ডিমোক্রিটাস উভয়েই জড় বস্তুর উপর আদৌ গুরুত্ব আরোপ করেননি। বিজ্ঞানের আলোচনা ছিল একেবারে গৌণ। তাদের প্রত্যেকের লেখা পুস্তকে যুক্তি অপেক্ষা কল্পনাই লাভ করেছিল প্রাধান্য। সেইদিক দিয়ে বিচার করলে জন ডালটনকেই প্র্রকৃত পরমাণুবাদের প্রবর্তকরূপে ব্যাখ্যা দেওয়া যায়।


 


১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে ইগলসফিল্ড নামক একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ডালটন। গ্রাম্য বিদ্যালয়ের তার প্রথম পড়াশোনা শুরু হয়। অতি বাল্যকাল থেকেই তার প্রতিভার স্ফুরণ ঘটেছিল। কথিত আছে, বিদ্যালয়ে পাঠকালেই তিনি গ্রিক ও ল্যাটিন নামক দুটি দুরূহ ভাষোকে আয়ত্ত করে নিয়েছিলেন। ছেলেবেলায় বিজ্ঞান এবং অঙ্কের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতেন ভয়ানকভাবে। তাই বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করার পর ডালটন বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষালাভের জন্য ভর্তি হন কলেজে। সেখানেও রেখেছিলেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। অবশেষে বিজ্ঞানে এম.এস.সি ডিগ্রি লাভের পর ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন অধ্যপকরূপে। সেই থেকেই তার আরম্ভ হয় গবেষণা। তখন তার বয়স ছিল মাত্র পঁচিশ বছর।


জন ডাল্টনের মৌলিক গবেষণাগুলো প্রথম ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। সে সময় তার গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ। ১৮০০ খ্রিস্টব্দে তিনি প্রকাশ করেছিলেন গ্যাস প্রসারণ সূত্র এবং গ্যাসের অংশ চাপ সূত্র। এই সূত্র দুটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানীদের মধ্যে একটা সাড়া পড়ে গিয়েছিল। বহু বিজ্ঞানী সেদিন গিয়ে এসেছিলেন ডালটনের সূত্রগুলোর যাচাই করতে। শেষে তারা সবাই স্বীকার করে নিয়েছিলেন সূত্রগুলোকে এবং ডালটনও প্রসিদ্ধিলাভ করেছিলেন বিশিষ্ট রসায়ন বিজ্ঞানী হিসেবে। এই ঘটনা থেকে রসায়ন বিজ্ঞান ডালটন ব্যতীত আরো বহু বিজ্ঞানীর মতবাদ লাভ করে নিজ ভান্ডার পুষ্ট করেছিল।


গ্যাস আয়তনের সূত্র আবিস্কারের পর ডালটনের মনে পদার্থের গঠন সম্পর্কে চিন্তা স্থার লাভ করেছিল। সেই চিন্তা থেকেই অচিরে জন্মলাভ করেছিল ‘পরমাণুবাদ’ নামক ডালটনের বিখ্যাত মতবাদটি। তার এই মতবাদ অনুসারে প্রতিটি মৌলিক পদার্থ বহুসংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও অবিভাজ্য কণা নিয়ে গঠিত। সেই অন্তিম কণাগুলোর নাম পরমাণু বা এ্যাটম। এই কণাকে ভাঙাও যায় না কিংবা গড়াও যায় না। প্রত্যেকটি মৌলিক পদার্থের পরমাণুরা ওজনে ও ধর্মে এক কিন্তু বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুদের ওজনে এবং ধর্মে স্বাতন্ত্র্য আছে। মৌলিক পদার্থের পরমাণুরা আবার সরল ও সুনির্দিষ্ট অনুপাতে যুক্ত হতে পারে।


ডালটন অবশ্য মৌলিক বা যৌগিক যে কোনো পদার্থের সূক্ষতম অন্তিম কণাকে পরমাণু নামে অভিহিত করেছিলেন। এইখানে ছিল তার কল্পনার বড় রকমের ক্রটি। সেই ক্রটি সংশোধিত হয়েছিল অনেক পরে। তাছাড়া পূর্ববর্তী কল্পনা আধুনিক পরমাণুবিজ্ঞান স্বীকার করছে না।


ডালটনের উপরোক্ত সূত্র ও মতবাদগুলো ছাড়া আরো অনেক আবিস্কার আছে। তিনি পরমাণুর সাংকেতিক চিহ্ন এবং পরমাণুর ওজন সম্বন্ধে গবেষণা করে বহু মূল্যবান তথ্য পরিবেশন করেছিলেন। ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে তিনি আবিস্কার করেছেলেন গ্যাসের তরলীকরণের উপায়। তিনিই প্রথম ঘোষণা করেছিলেন, উচ্চচাপে এবং নিম্ন তাপমাত্রার সমস্ত গ্যাসকে তরলে রূপান্তরিত করা সম্ভব।


ডালটন জীবদ্দশাতেই বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। পরিচিত হয়েছিলেন, তৎকালীন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের অন্যতম হিসেবে। জীবনে বহু সম্মান এবং পুরস্কার লাভ করেছিলেন তিনি। লন্ডনের বিখ্যাত রয়েল সোসাইটি ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে তার প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ দান করেছিল সুবর্ণপদক।


আজীবন অধ্যাপনা এবং গবেষণার পর ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে এই মহান বিজ্ঞানী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

 

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ই-কমার্স – Amazon অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা Jeff Bezos জেফ বেজোস সম্বন্ধে অজানা সব তথ্য

আমরা যে Amazon.com এর নামটা জানি তার পেছনে যে মানুষটা আছেন তিনি হলেন জেফ বেজোস । আজকের এই অনলাইন শপিং পদ্ধতির জনক তিনিই । তিনিই প্রথম অনলাইন শপিং চালু করেন এবং অ্যামাজন.কম প্রতিষ্ঠা করেন ।

বর্তমানে এই মানুষটি বিশ্বের ২১ তম ধনী ব্যাক্তি । তার মোট সম্পদের পরিমাণ হল ২৮.৮ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এই মানুষটা কোন স্থন থেকে শুরু করে আজ এই পজিশনে আছেন এা আমরা অনেকেই জানি না । তবে , আজ আমরা তার জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব । আমরা আজ জেফ বেজোস এর জীবন সম্পর্কে ২০ টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জানব ম যার মাধ্যমে আমরা সবাই অনুপ্রেরণা পেতে পারি । তো চলুন , শুরু করা যাক ।


 

জেফকে যে মানুষ করেছিলেন তিনি তার আসল পিতা ছিলেন না

Jeffrey Preston Jorgensenlit নামের এই ব্যাক্তি , যেটা তার ছোট বেলার নাম , তিনি ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারী জন্মগ্রহন করেন । তার বাবা ও মায়ের নাম হল জ্যাকলিন গিস র্জগসেন এবং টেড জর্গসেন । তারা বিয়ের মাত্র ১ বছর পরেই ডিভোর্স হয়ে যান । তারপর তার মা আবার মিগুয়েল মাইক বেজোস নামের এক ব্যাক্তিকে বিয়ে করেন ।

Source: Biography.com

Image Source: Achievement.org


 

তার দাদুর কাছ থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণা

জেফ বেজোস এর দাদু যিনি লরেন্স প্রিস্টন , যিনি ইউ এস এটোমিক এজেন্সি কমিশনের রিচিওনাল ডিরেক্টর ছিলেন , জেফ এর জীবনে তার অবদানই মনে হয় সবথেকে বেশী । এবং এই দাদুর কারণেই জেফ কম্পিউটারের প্রতি ঝুকে পড়েন যেটা তার পরবর্তী জীবনকে বদলে দিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে ।

Source: Wired.com

Image Source: Achievement.org


 

যেকোন বিষয়ে ছিল ব্যাপক আগ্রহ

জেফ বেজোস এর একটা শখ ছিল । সেটা হল কোন জিনিস কভিাবে কাজ করে সেটা বোঝা এবং কোন নষ্ট জিনিস মেরামত করা । এই কাজে তিনি সবসময়ই অন্যদের থেকে একধাপ এগিয়ে ছিলেন । তার ছোটবেলার সপ্ন ছিল মহাকাশ সম্পর্কিত কাজ করা ।

Source: Wired.com

Image Source: Biography.com


 

জেফ ছিলেন অত্যান্ত ক্রিয়েটিভ একজন মানুষ

তিনি ছোটবেলা থেকেই একজন খুবই ক্রিয়েটিভ মানুষ ছিলেন । তিনি সবসময় বিভিন্ নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কারের ভেতর ডুবে থাকতেন । যেমন তিনি ছোটবেলাতেই সোলার কুকার , হোভারক্রাফট , রোবট , ইলেকট্রিক এলার্ম ইত্যাদি আবিষ্কার করেন । তার তৈরী করা এলার্ম তিনি একটা সিকিউরিটি সিস্টেম হিসেবে কাজে লাগাতেন ।

Source: Biography.com


 

তার হাইস্কুল লাইফ

জেফ বেজোস হাই স্কুলে পড়াড় সময়ই নিজেকে একজন খুবই মেধাবী ও দক্ষ ছাত্র হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হন । তিনি প্রথমে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে ফিজিক্সে পড়া শুরু করেন , কিন্তু পরবর্তীতে তিনি কম্পিউটার সায়েন্স ও ইলেকট্রিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করেন ।

Source: Achievement.org

Image Source: Snakkle.com


 

জীবনের সবথেকে বড় দর্শন

২০১০ সালে প্রিন্সটন ইউুনর্ভাসিটিতে এক বক্তৃতা কালে তিনি তার জীবনের একটা কাহিনী বলেন । তিনি যখন তার দাদীকে তার সিগারেট খাওয়া সম্পর্কে জানান তখন তার দাদী খুবই দুঃখ পান । তারপর তার দাদু তাকে বলেছিলেন যে “জেফ , একদিন তুমি বুঝবে দয়ালূ হওয়া চালাক হওয়া থেকে অনেক কঠিন” । এই কথা তার জীবনে প্রতি ক্ষেত্রে চরমভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছিল ।

Source: Princeton.edu

Image Source: Npr.org


 

চাকরিতে যোগদান করা

জেফ তার কর্মজীবনের প্রথমে ফিটেল নামের একটা টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানীতে চাকরি করতেন । সেই কোম্পানীটা ২ বছর টিকেছিল । তারপর তিনি ব্যাংকার্স ট্রাস্ট এ একটা চাকরি করতেন । এরপর তিনি D.E. Shaw নামের একটা ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মে জয়েন করেন । এটা ছিল ওয়াল স্ট্রীটে ।

Source: Biography.com


 

একজন কলিগের প্রেমে পড়া ও বিয়ে

ম্যাকেনজি বেজোস নামের তার একজন কলিগ ছিল D.E. Shaw কোম্পানীতে । তিনি এই কোম্পানীতে কাজ করার সময় এ্ই মেযের প্রেমে পড়েন । অঃতপর তারা ১৯৯৩ সালে বিয়ে করেন । এইসময়ই তারা অ্যামাজন ডট কম এর প্লান তৈরী করেন ।

Source: WSJ.com

Image Source: Edge.org


 

জেফ বেজোস এর সন্তান সন্ততি সমাচার

জেফ এবং ম্যাকেনজির জীবনে মোট ৩ টি ছেলে ও একটি মেয়ে ছিল । এই মেযেটি অবশ্র তাদের নিজের না । মেয়েটিকে তারা চায়না থেকে দত্তক নেন ।

Source: CNN.com

Image Source: Dailymail.co.uk


 

চাকরি ছেড়ে অ্যামাজন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ

একটা সময় জেফ অ্যামাজন কোম্পানী স্টার্ট করার সিদ্ধান্ত নেন । জেফ এইসময় D.E. Shaw কোম্পানীর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন । তিনি অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই চাকরি টা ছেড়ে দেন । এইসময় তিনি একটা বাড়ি ভাড়া নেন এবং তার প্রথম কর্মচারী শেল কাপান কে নিয়ে অ্যামাজন এর কাজ শুরু করেন ।

Source: Wired.com

Image Source: Geekwire.com


 

একদিনেই অ্যামাজন নাম আসেনি

অ্যমাজন.কম কিন্তু একদিনেই অ্যামাজন.কম হয়নি । মানে জেফ যখন অনলাইন শপিং এর চিন্তুভাবনা নিয়ে প্রথম কাজ শুরু করেন তখন এটার নাম অ্যামাজন ছিল না । প্রথমে শুরু করার সময় এটি Cadabra বা Relentless.com নামে পরিচিত ছিল । পরে এটার নতুন নামকরণ করা হয় Amazon.com। এটার নাম মুলত নেওয়া হয়েছে দক্সিণ আমেরিকার নদী Amazon এর নাম থেকে । অর এর লোগোটার ডিজাইনে A তেকে Z পর্যন্ত একটা তীর চিহ্ন রয়েছে । এটা দ্বারা জেফ বোঝাতে চেয়েছেন যে এখানে মানুষের যত রকম পণ্য প্রয়োজন ততরকম সব পণ্যই পাওয়া যাবে ।

Source: TheGuardian.com

Image Source: Amazon Media Room


 

জেফ ছোট ছোট কাজে বিশ্বাস করতেন

জেফ তার ব্যাক্তিগত জীবনে “Two Pizza Rule” এ বিশ্বাস করতেন । তিনি বিশ্বাস করতেন যে একটা টীমকে যদি একটা পিজার ২ টা অংশ দ্বারা না সন্তুষ্ট করা যায় তাহলে এটা অনেক বড় একটা কাজ । তার কাছে সবার মতামত একসাথে করে সিদ্ধান্ত নেবার থেকে তার স্বাধীন চিন্তাধারাই গুরুত্ব খুব বেশী ছিল যেটা তার জীবনের মোড় ঘোরাতে অনেক সহায়তা করে ।

Source: FastCompany.com

Image Source: MT.nl


 

তিনি এখনও খুবই হিসাবী ব্যাক্তি

জেফ তার বাস্তব জীবনে ছিলেন খুবই মিতব্যায়ী। তার এই বৈশিষ্ঠটা Amazon.com শুরু করার সময় থেকেই প্রকাশ পায় । তার গ্যারেজে কাজ করার সময় তিনি একটা কাঠের দরজা থেকে একটা টেবিল তৈরী করেছিলেন । মজার ব্যাপার হল এখন পর্যন্ত Amazon.com এর কাঠের টেবিল গুলো সেই ডো-ডেস্ক মডেলে তৈরী ।

Source: Businessweek.com

Image Source: Artdaily.org


 

শুধু কাজ নয় , মহানুভবতাও ছিল জেফ এর ভেতর

জেফ শুধু একজন ভাল ব্যাবাসয়ীই ছিলেন না । কিনি একজন খুবই উদার মনের মানুষ ছিলেন । তার একজন কর্মচারী একবার ওয়াশিংটনে একটা সেম সেক্স ম্যারেজ এর জন্য তার কাছে ১ লাখ ডলার ডোনেশন চান । সেই সময় তিনি তাকে ২.৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে দেন । এটা থেকে বোঝা যায় যে তিনি কতটা উদার মনের মানুষ ছিলেন ।

Source: NYTimes.com

Image Source: FreedomToMarry.org


 

প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে তিনি ছিরেন একজন খুবই কঠোর প্রতিযোগী

জেফ এর ভেতর মনে হয় সবরকম গুণই প্রকট ছিল একজন সফল মানুষের যেগুলো থাকার দরকার । তিনি একজন খুবই প্রতিযোগিতাশীল মানুষ ছিলেন । তিনি তার প্রতিযোগীদের পরাস্ত করার জন্য তার কোম্পানীর পণ্যে একটা বিরাট ডিসকাউন্ট দিয়ে দেন । তার একজন খুবই কাছের পপ্রতিযোগী ছিল Quidsi , যিনি Diapers.com এর মালিক ছিলেন । জেফ তাকে মার্কেট থেকে বিদায় করার জন্য এক বিশাল ডিসকাউন্ট দেন । যেটা তার বিজনেসকে একেবারেই বিধস্ত করে দেয় ।

Source: SeattleTimes.com

Image Source: WashingtonPost.com


 

অলসতা মোটেই পছন্দ করতেন না জেফ

জেফ তার কোম্পানী নিয়ে অনেক সচেতন ছিলেন । তিনি অনেক বেশী কমপিটিটিভ মাইন্ডের ছিলেন এবং তিনি তার কোম্পানীর কারও অলসতা মোটেও পছন্দ করতেন না । তিনি সবসময়ই তার কোম্পানীর জন্য কর্মঠ ও কম্পিটিটিভ মাইন্ডের মানুষ খুজতেন । তিনি তার কর্মচারীদের অনেক সময় ডিরেক্ট ইনসাল্ট ও করতেন । যেমন “ আপনি কী অলস বা আপনার ভেতর কী প্রতিযোগীতামূলক কোন মানসিকতা নেই ?”

Source: Forbes.com

Image Source: Flickr.com


 

জীবনের ভয়াবহ এক্সিডেন্ট

২০০৩ সালে জেফ একটা হেলিকপ্টার এক্সিডেন্টের সম্মুখীন হন এবং এটার ফলে তার মাথায় মারাত্ম আঘাত লাগে । আর মজার ব্যাপার হল এই ঘটনার পর থেকে জেফ হেলিকপ্টারে চড়াই বন্ধ করে দেন ।

Source: FastCompany.com

Image Source: TheSmokingGun.com


 

নিউজপেপার কোম্পানী ক্রয়

জেফ বেজোস ২০১৩ সালে Washington Post কিনে নেন ২৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে । এটার মাধ্যমে তিনি অনেক পত্রিকার ও নিউজের হেডলাইনে পরিণত হন ।

Source: WashingtonPost.com

Image Source: Dailymail.co.uk


 

আরও অনেক শখ

আগেই বলেছি যে জেফ এর ছোটবেলার ইচ্ছা ছিল এ্যরোস্পেস নিয়ে । তিনি বর্তমানে ২০১০ সালে ব্লু অরিজিন নামের একটা স্পেস কোম্পানী তৈরী করেন । এটা মানুষকে কম খরচে মহাকাশ ভ্রমণের একটা সুযোগ করে দিচ্ছে ।

Source: Forbes.com

Image Source: Blueorigin.com


 

অ্যামাজনের পরবর্তী চিন্তাভাবনা

জেফ এর লেটেস্ট প্রোজেক্ট হল “Amazon Prime Air” , যেটাতে তিনি তার বিভিন্ন পণ্য বিভিন্ন দেশে ডেলিভার করার জন্য ড্রোন ইউজ করছেন । যদিও Federal Aviation Administration (FAA) এখনও তার এই বিষয়টা এপ্রুভ করেনি কারণ , কর্মাসিয়াল প্রয়োজনে ড্রোন ইউজ করার কোন নিয়ম এখনও নেই । যদিও জেফ এই বিষয়ে অত্যান্ত আশাবাদী যে তিনি আগামী কয়েক বছরের ভেতরই এই প্রজেক্ট সফল ভাবে শুরু করতে পারবেন ।

Source: USAToday.com


 

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা সফল হইনা


আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি জীবনে বড় হবো। কেউ হয়তো শুধু স্বপ্ন দেখি, কেউ হয়তো স্বপ্নটাকে ছোয়ার জন্য আরাম আয়েশ ত্যাগ করে রাতদিন খাটি। কিন্তু দেখা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা সফল হইনা। যখন ব্যার্থ হই তখন দেখা যায় আর পুনরায় পরিশ্রম করবার মত সময় নেই। ডুবে যেতে হয় হতাশায়। ব্যার্থতা আর হতাশা তখন আমাদের সব উদ্যম নষ্ট করে দেয়।


না এখানেই সব শেষ নয়।

যেখান থেকে শেষ সেখান থেকে শুরু করে দেখুন।


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন (জন্ম: ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৮০৯ – মৃত্যু: ১৫ এপ্রিল, ১৮৬৫) এর কথাই ধরি, আজকে শুধু তার দৃষ্টান্ত দেখাবো, পরবর্তীতে ব্যার্থতা থেকে সফলতার অনেক গুলো পর্ব নিয়ে আসবার ইচ্ছা থাকলো। ব্যর্থতাকে কিভাবে জয়ে পরিনত করতে হয়, নতুন করে শুরু করতে হয়, একবার হারিয়েছি বলে সব শেষ হয়ে গিয়েছে এটাই শেষ কথা নয়। একবার না পারিলে দেখো শতবার কথাটা যে সত্য সেটার সার্থকতা আপনিও প্রমান করতে পারবেন।


০১) ২৩ বছর বয়সে চাকুরী হারান এবং রাজনীতিতে পরাজিত হন।

০২) ২৪ বছর বয়সে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে ব্যবসার মূলধন হারান।

০৩) ২৬ বছর বয়সে হারান প্রিয়তমা প্রেমিকা অ্যান কে।

০৪) ২৭ বছর বয়সে তার নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়।

০৫) দেখতে ও সুশ্রী ছিলেননা।

০৬) জন্মেছিলেন অতি দরিদ্র ঘরে।

০৭) ২৯ বছর বয়সে স্পীকার পদে পরাজিত হন।

০৮) ৩৪ বছর বয়সে কংগ্রেস প্রার্থী নির্বাচনে হেরে যান।

০৯) ৩৯ বছর বয়সে কংগ্রেস প্রার্থী নির্বাচনে আবার পরাজিত হন।

১০) ৪০ বছর বয়সে ভূমি অফিসার পদে রিজেক্ট বা বাদ পড়েন।

১১) সিনেট নির্বাচনে হেরে যান ৪৫ বছর বয়সে।

১২) ৪৭ বছর বয়সে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে গিয়ে হেরে যান।

১৩) ৪৯ বছর বয়সে সিনেট নির্বাচনে আবারো হারেন

১৪) অবশেষে ৫২ বছর বয়সে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।


এই হলো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ব্যার্থতার খেরোখাতা। আজ আমরা হলে হয়তো হাল ছেড়ে দিতাম। বলতাম এসব আমার জন্য নয়। কিন্তু না তিনি ছিলেন আব্রাহাম লিংকন, অতি দরিদ্র অবস্থা থেকেই অসম্ভব স্বপ্নকে ছুয়েছিলেন। হয়েছিলেন আমেরিকার সর্বকালের সেরা প্রেসিডেন্ট। আমেরিকার গৃহযুদ্ধ ঠেকিয়েছিলেন, সাদা কালোর বিভেদ দুর করেছিলেন, সংকটময় মুহুর্তে আবির্ভাব হয়েছিলেন আমেরিকার ত্রাতা হিসেবে। কোয়ান্টাম মেথডের মতে পারবোনা বললেই আর পারবেননা। শুধু একবার পারবো বললেই অনেক কিছু পারবেন। পারবোনা বললে দেখবেন অনেক না পারার অজুহাত চলে আসবে। এটা সেটা বলবেন, হয়তো অজুহাত দেখাবেন, আপনি গরীব ঘরে জন্মেছেন, আপনি বস্তিতে জন্মেছেন, আপনার বাবার টাকা নেই, আপনি কালো, আপনি বেটে, আপনি পড়াশোনাই ভালোনা, আপনি নিচু জাতে জন্মেছেন। থাক আর বলবোনা। এবার দেখুন আপনার এসব অজুহাত কিছুনা। আপনি শুধু খুজে বের করুন আপনার প্রতিভা কিসে, কোনটা করতে ভালো লাগে, আর করুন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে পরিশ্রম। আর সব থেকে বড় কথা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের মা বাবারা ছেলেকে কি বানাবেন জিজ্ঞাসা করলে সেই মান্ধাতা আমলের উত্তর, ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ার, বোধ হয় জগতে এ ছাড়া আর পেশা নেই। আর কোন পথ নেই। A+ না পেলে তুমি ফিনিসড এটাই শিখানো হচ্ছে। এতে না তৈরি হচ্ছে কোন সৃজনশীল সাহিত্য মনের মানুষ। আমরা শুধু রবীন্দ্র নজরুল শরৎ বাবুর দেবদাস এসব অনুকরন করছি, এক অভিনেতা দেবদাস করেছে ০৫ বছর আগে তো আরেকজন সেই একই দেবদাস করছে ০৫ বছর পর। নতুন করে দেবদাসের মত আরেকটা রোমান্টিক উপন্যাস রচনার মত লেখক তৈরি হচ্ছেনা। বাবুরাম সাপুড়ে সেই কোনকালে রচিত, এ রকম একটা ছড়া আমরা রচনা করতে পারছিনা, পারছি ওই ছড়াটাকে রক স্টাইলে পাশ্চাত্য ঢঙে রিমিক্স করে বানাতে।


তো বলছিলাম আপনার কাজ না করার অজুহাতের কথা। বস্তিতে জন্মেছেন, আপনি অবহেলিত, সমাজের মানুষেরা আপনাকে ঘৃনা করে দুর দুর করে তাড়ায়, এ জন্য আপনি মনে করেন টোকাই হয়ে থাকতে হবে সারাজীবন ? তাহলে তাকান আর্জেন্টাইন ফুটবলার মেসির দিকে, ডাক্তার বলেছিলেন ও বামন রোগে আক্রান্ত। চারফুটের বেশি বাড়বেনা। সব মিথ্যে, সব মিথ্যা প্রমান করে সে বার্সেলোনাতে ছোট বয়স থেকেই তার স্থান নিলো। বিশ্বখ্যাত বিশ্বসেরা ক্লাব বার্সেলোনা তার দায়িত্ব নিলো। মেসির বাবার কি ছিলো, ছিলো শুধু মেসির প্রতিভা, সব কথা মিথ্যা করে মেসি ভিনগ্রহের খেলোয়াড় হলেন, উচ্চতা ৫ ফুট ০৭ ইঞ্চি হলো বিধাতার আশির্বাদে। হয়তো পরিশ্রমী আর ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়। আপনার জাত ছোট, তাহলে দেখুন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদির দিকে, সামান্য চা বিক্রি করা বাবার ছেলে যে নিজেও চা বিক্রি করে আজ বৃহৎ দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আপনি বেটে, বাংলাদেশের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম বা মমিনুল কে দেখুন বা ভারতের শচীন টেন্ডুলকারকে দেখুন, বা কিংবদন্তী ফুটবল যাদুকর ম্যারাডোনা কে দেখুন। আপনি কালো, তাতে কি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল, শ্রীলংকান মুত্তিয়া মুরালিধরন,সর্বকালের সেরা বক্সার মোহাম্মদ আলী, ব্রাজিলের ফুটবল কিংবদন্তী পেলে এরা তো সবাই কালো।আপনার ব্যবসার টাকা নেই, আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আকিজ সাহেবের শুরুর কাহিনী নেটে সার্চ দিয়ে পড়ে নিন। পড়াশোনার কথা বলছেন,, বিশ্বের এক নম্বর ধনী বিলগেটস পড়াশোনা সম্পূর্ন না করে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মাইক্রোসফটের মত প্রতিষ্ঠান। পড়াশোনাতে ভালো না করেও তেতুলিয়ার মুস্তাফিজ বাংলাদেশের হালের বিশ্ব ক্রিকেট সেনশেসন। তবে আমি পড়াশোনা ফাঁকিবাজ দের সম্পূর্ন বিরোধী। মনে রাখবে পড়াশোনা না করলেই রবীন্দ্র নজরুল মুস্তাফিজ বা বিলগেটস হওয়া যায়না। এটা শুধু বলেছি এ কারনে যে কোনক্রেমে তুমি জীবনযুদ্ধ না বুঝে পড়াশোনায় ফাকি দিয়েছো, রেজাল্ট খারাপ করে কোন ভালো ভবিষ্যত দেখছোনা, তো যেটা হয়নি সেটা ভেবে লাভ নেই, PAST IS PAST, এখন চেষ্টা করো অন্য কিছু করবার পৃথিবী তোমাকে যেমন হাজারটা সমস্যা দিয়েছে তেমন দিয়েছে হাজারটা সমাধান। সুশিক্ষিত জাতি গড়তে শিক্ষার বিকল্প নেই।


আরো একটা সংস্কার আমাদের সমাজে যার জন্য বেকারত্ব বেশি, আমাদের কাজকে ছোট মনে করা। ধরুন আপনার বাবা বড় কর্মকর্তা। তিনি কর্মকর্তা হয়েছেন তার নিজের মেধা ও যোগ্যতায়। কিন্তু দেখা গেলো হয়তো তার কর্মব্যাস্ততার কারনে আপনাকে তিনি ততটা গাইড করতে পারেননি। ফলে আপনি বাজে বন্ধুর কারনে বখাটে হলেন। পরীক্ষার আগে পড়াশোনা করলেন এবং কোনরকম পাশ করলেন। ফলে আপনি না পারবেন বাবার মত যোগ্য হতে বা না পারবেন নার্সারি, মাছ চাষ, পোল্ট্রি বা ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং এর মত সম্ভাবনাময় খাতের উদ্যোক্তা হতে। হয়তো আপনাকে দেখে পাছে লোকে টিপ্পনি কাটে অফিসারের ছেলে শেষে মুরগী পালবে। তখন আপনি মান রক্ষার্থে স্ট্যাটাস রক্ষার্থে অসাধু পন্থায় একটা চাকুরী যোগাড় করলেন। সাথে হয়তো দরিদ্র বলে একটা প্রতিভা যে আপনার থেকে কাজ ভালো বুঝতো তাকে বঞ্চিত করলেন। এই জাতীয় ছোট মানসিকতা থেকে না বের হতে পারলে আমাদের উন্নতি হবেনা বা বেকারত্ব থেকে মুক্ত হবেনা।


সবশেষে একটা কথা বলি তোমার যদি কিছু করবার ইচ্ছা থাকে তবে কোন কিছুই তোমাকে আটকাতে পারবেনা। তুমি পারবে, যদি তোমার ভিতর থাকে ইচ্ছার আগুন। If you have only fire

 

সর্বকালের সেরা পদার্থ বিজ্ঞানী “আইনস্টাইন”

তার জন্ম স্থান জার্মানিতে। সেখানকার একটি ছোট শহর উলমে এক ইহুদি পরিবারে মহান বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের জন্ম (১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ)।

পিতা পেশায় ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার। তাই মাঝে মাঝেই ছেলেকে নানা ধরণের খেলনা এনে দিতে পারতেন। শিশু আইনস্টাইনের বিচিত্র চরিত্রকে সেই দিন উপলব্ধি করা সম্ভব হয়নি তার অভিভাবক, তার শিক্ষকদের। তার স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে মাঝে মাঝেই অভিযোগ আসত, পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া ছেলে, অমনোযোগী, আনমনা ইত্যাদি। এতে করে বেস বিরক্ত হতেন তিনি। ক্লাসের কেউ তার সঙ্গী ছিল না। সকলের শেষে পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসতেন এবং কিছু না কিছু ভাবতে থাকতেন।

তার একমাত্র সঙ্গী ছিল তার মা। তিনি ভালো বেহালা বাজাতে পারতেন। আইনস্টাইন তার কাছে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের নানা সুর শুনতেন। এই বেহালা ছিল আইনস্টাইনের আজীবন কালের সাথী। বাবাকে খুব বেশি একটা কাছে পেতেন না আইনস্টাইন। নিজের কারখানা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তিনি। আনন্দেই কাটছিল তার জীবন।

সেই আনন্দে ভরা দিনগুলোর মাঝে হঠাৎ কালো দিন ঘনিয়ে এল। তাই সেই শৈশবেই আইনস্টাইন প্রথম অনুভব করলেন জীবনের তিক্ত স্বাদ। তারা ছিলেন ইহুদি। কিন্তু স্কুলে ক্যাথলিক ধর্মের নিয়মকানুন মেনে চলতে হতো।

স্কুলের সমস্ত পরিবেশটাই বিষাদ হয়ে গিয়েছিল তার কাছে। দর্শনের বই তাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করত। পনেরো বছর বয়সের মধ্যে তিনি কান্ট, স্পিনোজা, ইউক্লিড, নিউটনের রচনা পড়ে শেষ করে ফেললেন। বিজ্ঞান, দর্শনের সাথে পড়তেন গ্যেটে, শিলার, শেক্সপিয়ারের বই সমূহ। অবসর সময়ে বেহালায় বিটোফোন, মোতসার্টের সুর তুলতেন। এরাই ছিল তার সঙ্গী বন্ধু, তাঁর জগৎ। এভাবেই তিনি সময় কাটাতেন।

এই সময় বাবার ব্যবসায় মন্দা দেখা দিল। তিনি স্থির করলেন মিউনিখ ছেড়ে মিলানে চলে যাবেন। তাতে যদি ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। সকলে মিউনিখ ত্যাগ করল, শুধু সেখানে একা রয়ে গেলেন আইনস্টাইন।

সুইজারল্যান্ডের একটি পলিটেকনিক স্কুলে ভর্তি হলেন। প্রথমবার তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেন না। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় পরীক্ষায় পাস করলেন। বাড়ির আর্থিক অবস্থা ক্রমশই খারাপ হয়ে আসছে। আইনস্টাইন অনুভব করলেন সংসারের দায়-দায়িত্ব তাকে গ্রহণ করতেই হবে। শিক্ষকতার বৃত্তি গ্রহণ করার জন্য তিনি পদার্থবিদ্যা ও গণিত নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন। জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে শিক্ষকতার জন্য বিভিন্ন স্কুলে দরখাস্ত করতে আরম্ভ করলেন। অনেকের চেয়েই শিক্ষাগত যোগ্যতা তার বেশি ছিল কিন্তু কোথাও চাকরি পেলেন না। কারণ তার অপরাধ তিনি ইহুদি।

নিরুপায় আইনস্টাইন খরচ চালানোর প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র পড়াতে আরম্ভ করলেন। এই সময় আইনস্টাইন তার স্কুলের সহপাঠিনী মিলেভা মারেককে বিয়ে করলেন। তখন তার বয়স মাত্র ২২ বছর। মিলেভা শুধু আইনস্টাইনের স্ত্রী ছিলেন না, প্রকৃত অর্থেই তার জীবনসঙ্গী ছিলেন।


আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন শিক্ষকতার কাজ পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। একটি অফিসে ক্লার্কের চাকরি নিলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজের খাতার পাতায় সমাধান করতেন অঙ্কের জটিল তত্ত্ব। স্বপ্ন দেখতেন প্রকৃতির দুর্জ্ঞেয় রহস্য ভেদ করার। তার এই গোপন সাধনার কথা শুধু মিলেভাকে বলেছিলেন, ‘আমি এই বিশ্বপ্রকৃতির স্থান ও সময় নিয়ে গবেষণা করছি।’

আইনস্টাইনের এই গবেষণায় ছিল না কোনো ল্যাবরেটরি, ছিল না কোনো যন্ত্রপাতি। তার একমাত্র অবলম্বন ছিল খাতা-কলম আর তার অসাধারণ চিন্তাশক্তি। অবশেষে শেষ হলো তার গবেষণা। তখন তার বয়স মাত্র ২৬ বছর। একদিন ত্রিশ পাতার একটি প্রবন্ধ নিয়ে হাজির হলেন বার্লিনের বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক পত্রিকা Annalen der physik-এর অফিসে।

এই পত্রিকায় ১৯০১ থেকে ১৯০৭ পর্যন্ত আইনস্টাইন পাঁচটি রচনা প্রকাশ করলেন। এসব রচনায় প্রচলিত বিষয়কে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতে আইনস্টাইনের নাম বিজ্ঞানী মহলে ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কোনো সুরাহা হলো না। নিতান্ত বাধ্য হয়ে বাড়িতে ছাত্র পড়ানোর কাজ নিলেন।


 

একদিকে অফিসের কাজ, মিলেভার স্নেহভরা ভালোবাসা, অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা অবশেষে ১৯০৫ সালে প্রকাশিত হলো তার চারটি রচনা-প্রথমটি আলোর গঠন ও শক্তি সম্পর্কে। দ্বিতীয়টি অ্যাটমের আকৃতি-প্রকৃতি। তৃতীয়টি ব্রাউনিয়াম মুভমেন্টের ক্রমবিকাশের তত্ত্ব। চতুর্থটি তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। যা বিজ্ঞানের জগতে এক নতুন দিগন্ত উদ্ভাসিত করল। এই আপেক্ষিকতা বলতে বোঝায় কোনো বস্তুর সঙ্গে সম্বন্ধ বা অন্য কিছুর তুলনা। আইনস্টাইন বললেন আমরা যখন কোনো সময় বা স্থান পরিমাপ করি তখন আমাদের অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনা করতে হবে। তিনি বলেছেন আলোক বিশ্বজগৎ, কাল এবং মাত্রা আপেক্ষিক।


 

আমাদের মহাবিশ্বে একটি মাত্র গতি আছে যা আপেক্ষিক নয়, অন্য কোনো গতির সঙ্গেও এর তুলনা হয় না-এই গতি হচ্ছে আলোকের গতি। এই গতি কখনোই পরিবর্তন হয় না। এই সময় জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণ জানানো হলো আইনস্টাইনকে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেয়ার জন্য। ১৯০৭ সালে তিনি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হলেন। এরই সাথে পেটেন্ট অফিসের চাকরিও করেন।


 

বিজ্ঞান জগতে ক্রমশই আইনস্টাইনের নাম ছড়িয়ে পড়ছিল। বিজ্ঞানী কেলভিনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। এখানে তাকে অনারারি ডক্টরেট উপাধি দেয়া হলো। এরপর তার ডাক এল জার্মানির সলসবার্গ কনফারেন্স থেকে। এখানে জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের সামনে তার প্রবন্ধ পড়লেন আইনস্টাইন। তিনি বললেন, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অগ্রগতির পরবর্তী পর্যায়ে আমরা এমন কোনো এক তত্ত্ব পাব যা আলোর কণাতত্ত্ব এবং তরঙ্গ তত্ত্বকে সময়ের বাঁধনে বাঁধতে পারবে।


 

আইনস্টাইনের এই উক্তির জবাবে বিজ্ঞানী প্লাঙ্ক বললেন, আইনস্টাইন যা চিন্তা করছেন সেই পর্যায়ে চিন্তা করার সময় এখনো আসেনি। এর উত্তরে আইনস্টাইন তার বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের ঊ=সপ২ উৎপত্তিটি আলোচনা করে বোঝালেন তিনি যা প্রমাণ করতে চাইছেন তা কতখানি সত্য।


 

১৯০৮ সালে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার পদ সৃষ্টি করা হলো। রাজনৈতিক মহলের চাপে এই পদে মনোনীত করা হলো আইনস্টাইনের সহপাঠী ফ্রেডরিখ এডলারকে। ফ্রেডরিক নতুন পদে যোগ দিয়েই জানতে পারলেন এই পদের জন্য আইনস্টাইনের পরিবর্তে তাকে নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি কর্তৃপক্ষকে জানালেন এই পদের জন্য আইনস্টাইনের চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি আর কেউ নেই। তার তুলনায় আমার জ্ঞান নেহাতই নগণ্য।


 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও উপলব্ধি করতে পারলেন ফ্রেডরিখের কথার গুরুত্ব। অবশেষে ১৯০৯ সালে আইনস্টাইন তার পেটেন্ট অফিসের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে পুরোপুরি শিক্ষকতা পেশা গ্রহণ করলেন। জুরিখে এসে বাসা ভাড়া করলেন।


 

আইনস্টাইন আর কেরানি নন, প্রফেসর। কিন্তু মাইনে আগে পেতেন ৪৫০০ ফ্রাঙ্ক, এখনো তাই। তবে লেকচার ফি বাবদ সামান্য কিছু বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার সুযোগে বহু মানুষের সাথে, গুণী বিজ্ঞানীদের সাথে পরিচয় হয়। এমন সময় ডাক এল জার্মানির প্রাগ থেকে। জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে তাকে নিয়োগপত্র দেয়া হলো। মাইনে আগের চেয়ে বেশি। তাছাড়া প্রাগে গবেষণার জন্য পাবেন বিশাল লাইব্রেরি। ১৯১১ সালে সপরিবারে প্রাগে এলেন আইনস্টাইন। কয়েক মাস আগে তার দ্বিতীয় পুত্রের জন্ম হয়েছে।


 

অবশেষে দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত জুরিখের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক এল আইনস্টাইনের। ১৯১২ সালে প্রাগ ত্যাগ করে এলেন জুরিখে। এখানে তখন ছুটি কাটাতে এসেছিলেন মাদাম কুরি, সঙ্গে দুই কন্যা। দুই বিজ্ঞানীর মধ্যে গড়ে উঠল মধুর বন্ধুত্ব। পাহাড়ি পথ ধরে যেতে যেতে মাদাম কুরি ব্যাখ্যা করেন তেজস্ক্রিয়তা আর আইনস্টাইন বলেন তার আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। একদিন নিজের তত্ত্বের কথা বলতে বলতে এত তন্ময় হয়ে পড়েছিলেন পথের ধারে গর্তের মধ্যে গড়িয়ে পড়লেন আইনস্টাইন। তাই দেখে মেরি কুরির দুই মেয়ে হাসিতে ফেটে পড়ল। গর্ত থেকে উঠে তাদের সঙ্গে আইনস্টাইনও হাসিতে যোগ দিলেন।


 

সেই সময় জার্মানিতে কাইজারের পৃষ্ঠপোষকতায় বার্লিন শহরে গড়ে উঠেছে কাইজার তিলহেলম ইনস্টিটিউট। বিজ্ঞানের এতবড় গবেষণাগার পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এখানে যোগ দিয়েছেন প্লাঙ্ক, নার্নস্ট, হারের আরো সব বিখ্যাত বিজ্ঞানী। কিন্তু আইনস্টাইন না থাকলে যে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে সবকিছু। তাকে আমন্ত্রণ জানানো হলো।


 

বার্লিনে এলেন আইনস্টাইন। সবকিছু দেখে মুগ্ধ হলেন তিনি। শুধু গবেষণাগার নয়, বহু বিজ্ঞানীকেও কাছে পাওয়া যাবে। একসাথে কাজ করা যাবে। তাকে মাইনে দেয়া হলো বর্তমান মাইনের দ্বিগুণ।


 

১৯১৪ সালে বার্লিনে এলেন আইনস্টাইন। যখন আইনস্টাইন বার্লিন ছেড়েছিলেন তখন তিনি পনেরো বছরের কিশোর। দীর্ঘ কুড়ি বছর পর ফিরে এলেন নিজের শহরে। চেনাজানা পরিচিত মানুষদের সাথে দেখা হলো। সবচেয়ে ভালো লাগল দূরসম্পর্কিত বোন কাছে ফিরে এসেছে। এলসার সান্নিধ্য বরাবরই মুগ্ধ করত আইনস্টাইনকে। অল্পদিনেই অনেকের সাথেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠল।


 

ছেলেবেলা থেকেই যেখানে সেখানে অঙ্ক করার অভ্যাস ছিল আইনস্টাইনের। কখনো ঘরের মেঝেতে, কখনো টেবিলের ওপর। টেবিল ভর্তি হয়ে গেলে মাটিতে বসে চেয়ারের উপরেই অঙ্ক কষে চলেছেন।


 

গবেষণায় যতই মনোযোগী হয়ে উঠেছিলেন আইনস্টাইন, সংসারের প্রতি ততই উদাসীন হয়ে পড়ছিলেন। স্ত্রী মিলেভার সাথে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। ক্রমশই সন্দেহবাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়ছিলেন মিলেভা। দুই ছেলেকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে চলে গেলেন। কয়েক মাস কেটে গেল আর ফিরলেন না মিলেভা।


 

এদিকে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হলো। বিজ্ঞানীদের অধিকাংশই জড়িয়ে পড়লেন যুদ্ধে। আইনস্টাইন এই যুদ্ধের বীভৎসতা দেখে ব্যথিত হলেন। এরই সাথে সংসারের একাকিত্ব, স্ত্রী-পুত্রকে হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেন আইনস্টাইন।


 

এই সময় অসুস্থ আইনস্টাইনের পাশে এসে দাঁড়ালেন এলসা। এলসার অক্লান্ত সেবা-যত্নে ক্রমশই সুস্থ হয়ে উঠলেন আইনস্টাইন। তিনি স্থির করলেন মিলেভার সাথে আর সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব নয়। অবশেষে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেল। আইনস্টাইন এলসাকে বিয়ে করলেন। এদিকে যুদ্ধ শেষ হলো। কাইজারের পতন ঘটল। প্রতিষ্ঠা হলো নতুন জার্মান রিপাবলিকের। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব তখনো প্রমাণিত হয়নি। এগিয়ে এলেন ইংরেজ বিজ্ঞানীরা। সূর্যগ্রহণের একাধিক ছবি তোলা হলো। সেই ছবি পরীক্ষা করে দেখা গেল আলো বাঁকে।


 

বিজ্ঞানীরা উত্তেজনায় ফেটে পড়লেন। মানুষ তার জ্ঞানের সীমানাকে অতিক্রম করতে চলেছে। অবশেষে ৬ নভেম্বর ইংল্যান্ডের রয়্যাল সোসাইটিতে ঘোষণা করা হলো সেই যুগান্তকারী আবিষ্কার, আলো বেঁকে যায়। এই বাঁকের নিয়ম নিউটনের তত্ত্বে নেই। আলোর বাঁকের মাপ আছে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের সূত্রে।


 

পরিহাসপ্রিয় আইনস্টাইন তার এই যুগান্তকারী আবিষ্কার নিয়ে কৌতুক করে বললেন, আমার আপেক্ষিক তত্ত্ব সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবার জার্মানি বলবে আমি জার্মান আর ফরাসিরা বলবে আমি বিশ্বনাগরিক। কিন্তু যদি আমার তত্ত্ব মিথ্যা হতো তাহলে ফরাসিরা বলত আমি জার্মান আর জার্মানরা বলত আমি ইহুদি।

একদিন এক তরুণ সাংবাদিক বললেন, আপনি সংক্ষেপে বলুন আপেক্ষিক তত্ত্বটা কী?
আইনস্টাইন কৌতুক করে বললেন, যখন একজন লোক কোনো সুন্দরীর সঙ্গে এক ঘণ্টা গল্প করে তখন তার মনে হয় যে যেন এক মিনিট বসে আছে। কিন্তু যখন তাকে কোনো গরম উনানের ধারে এক মিনিট দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় তার মনে হয় সে যেন এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে। এই হচ্ছে আপেক্ষিক তত্ত্ব।

আপেক্ষিক তত্ত্বে জটিলতার দুর্বোধ্যতার কারণে মুখরোচক কিছু কাহিনী ছড়িয়ে পড়ল। একদিন এক সুন্দরী তরুণী তার প্রেমিকের সাথে চার্চের ফাদারের পরিচয় করিয়ে দিল। পরদিন যখন মেয়েটি ফাদারের কাছে গিয়েছে ফাদার তাকে কাছে ডেকে বললেন, তোমার প্রেমিককে আমার সব দিক থেকেই ভালো লেগেছে শুধু একটি বিষয় ছাড়া।


 

মেয়েটি কৌতুহলে জিজ্ঞাসা করল, কোন বিষয়? ফাদার বললেন তার কোনো রসবোধ নেই। আমি তাকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের কথা জিজ্ঞাসা করেছি আর সে আমাকে তাই বোঝাতে আরম্ভ করল। হাসিতে ফেটে পড়ল মেয়েটি।


 

আমেরিকার এক বিখ্যাত সুরকার জর্জ তার এক বন্ধুকে বললেন, একজন মানুষ কুড়ি বছর ধরে একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করলেন, আর ভাবলে অবাক হতে হয় সেই চিন্তাটুকুকে প্রকাশ করলেন মাত্র তিন পাতায়। বন্ধুটি জবাব দিল নিশ্চয়ই খুব ছোট অক্ষরে ছাপা হয়েছিল।


 

আইনস্টাইন আমেরিকায় গিয়েছেন, সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরল। একজন জিজ্ঞেস করল, আপনি কি এক কথায় আপেক্ষিক তত্ত্বের ব্যাখ্যা করতে পারেন? আইনস্টাইন জবাব দিলেন, না।
আজকাল মেয়েরা কেন আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে এত আলোচনা করছে? আইনস্টাইন হাসতে হাসতে বললেন, মেয়েরা সব সময়ই নতুন কিছু পছন্দ করে-এই বছরের নতুন জিনিস হলো আপেক্ষিক তত্ত্ব।


 

অবশেষে এল সাধক বিজ্ঞানীর জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার। কিছুদিন ধরেই নোবেল কমিটি আইনস্টাইনকে নোবেল পুরস্কার দেয়ার কথা চিন্তা করছিল। কিন্তু সংশয় দেখা গেল স্বয়ং নোবেলের ঘোষণার মধ্যে। তিনি বলে গিয়েছিলেন পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পাবেন আবিষ্কারক আর সেই আবিষ্কার যেন মানুষের কল্যাণে লাগে। আইনস্টাইনের বেলায় বিতর্ক দেখা দিল তার আপেক্ষিক তত্ত্ব যুগান্তকারী হলেও প্রত্যক্ষভাবে তা মানুষের কোনো কাজে লাগবে না।

তখন তার ফটো ইলেকট্রিক অ্যাফেক্ট বা আলোক তড়িৎ ফলকে সরাসরি আবিষ্কার হিসেবে বলা সম্ভব এবং এর প্রত্যক্ষ ব্যবহারও হচ্ছে তাই ঘোষণা করা হলো Service to the theory of Physics, especially for the Law of the Photo Electric Effect. আইনস্টাইন তার প্রথমা স্ত্রী মিলেভার সাথে বিবাহবিচ্ছেদের শর্ত অনুসারে নোবেল পুরস্কারের পুরো টাকাটা তাকে পাঠিয়ে দেন।

আমেরিকায় বক্তৃতা দেয়ার জন্য বারবার ডাক আসছিল। অবশেষে ১৯৩০ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন, সেখানে অভূতপূর্ব সম্মান পেলেন। শুধু আমেরিকা নয়, যখন যে দেশেই যান সেখানেই পান সম্মান আর ভালোবাসা।


 

এদিকে স্বদেশ জার্মানি ক্রমশই আইনস্টাইনের কাছে পরবাস হয়ে উঠেছিল। একদিকে তার সাফল্য স্বীকৃতিকে কিছু বিজ্ঞানী ঈর্ষার দৃষ্টিতে দেখতে থাকে, অন্যদিকে হিটলারের আবির্ভাবে দেশজুড়ে এক জাতীয়তাবাদের নেশায় মত্ত হয়ে ওঠে একদল মানুষ। ইহুদিরা ক্রমশই ঘৃণিত দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে পরিগণিত হতে থাকে। আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন জার্মানিতে থাকা তার পক্ষে মোটেই নিরাপদ নয়। কিন্তু কোথায় যাবেন? আহ্বান আসে নানা দেশ থেকে। অবশেষে স্থির করলেন আমেরিকার প্রিন্সটানে যাবেন।


 

জার্মানি থেকে ইহুদি বিতাড়ন শুরু হয়ে যায়। আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন এবার তারও যাওয়ার পালা। প্রথমে গেলেন ইংল্যান্ডে। সেখান থেকে ১৯৩৪ সালের ৭ জুলাই রওনা হলেন আমেরিকায়। তখন তার বয়স পঞ্চান্ন বছর।


 

প্রিন্সটনের কর্তৃপক্ষ আইনস্টাইনের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। গুপ্তঘাতকের দল যে সাগর পেরিয়ে আমেরিকায় এসে পৌঁছবে না তাই বা কে বলতে পারে। তাই তাকে গোপন জায়গায় রাখা হলো। সেই বাড়ির ঠিকানা কাউকে জানানো হলো না। এভাবে থাকতে তার আর ভালো লাগে না। মাঝে মাঝে ল্যাবরেটরি থেকে এসে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। একদিন সন্ধ্যাবেলায় প্রিন্সটনের ডিরেকটরের বাড়িতে ফোন এল দয়া করে যদি আইনস্টাইনের বাড়ির নম্বরটা জানান। আইনস্টাইনের বাড়ির নম্বর কাউকে জানানো হবে না বলে ফোনটা নামিয়ে রাখলেন ডিরেকটার।


 

খানিক পরে আবার ফোন বেজে উঠল। আমি আইনস্টাইন বলছি, বাড়ির নম্বর আর রাস্তা দুটোই ভুলে গিয়েছি। যদি দয়া করে বলে দেন। এ এক বিচিত্র ঘটনা, যে মানুষটি নিজের ঘরের ঠিকানা মনে রাখতে পারেন না, তিনি বিশ্বপ্রকৃতির রহস্যের ঠিকানা খুঁজে বের করেন।


 

প্রকৃতপক্ষে জীবনের উত্তরপর্বে এসে আইনস্টাইন হয়ে উঠেছিলেন গৃহ সন্ন্যাসী। বড়দের চেয়ে শিশুরাই তার প্রিয়। তাদের মধ্যে গেলে সবকিছু ভুলে যান। শিশুদের কাছে কল্পনার ক্রিসমাস বুড়ো। পরনে কোট নেই, টাই নেই, জ্যাকেট নেই। ঢলঢলে প্যান্ট আর গলা আঁটা সোয়েটার, মাথায় বড় বড় চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, ঝ্যাটা গোঁফ। দাড়ি কামাতে অর্ধেক দিন ভুলে যান। যখন মনে পড়ে গায়ে মাখা সাবানটা গালে ঘষে দাড়ি কেটে নেন। কেউ জিজ্ঞেস করলে কী ব্যাপার গায়ে মাখা সাবান দিয়ে দাড়ি কাটা, আইনস্টাইন জবাব দিতেন, দুরকম সাবান ব্যবহার করে কী লাভ?


 

শুধু নির্যাতিত ইহুদিদের সপক্ষে নয়, তিনি ক্রমশই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন সমগ্র মানবজাতির ভবিষ্যতের কথা ভেবে। যুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করছে, দলমত নির্বিশেষে তিনি তাদের সমর্থন করলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন একদিন মানুষ এই ধ্বংসের উন্মাদনা ভুলে এক হবেই। আর একত্বতার মধ্যেই মানুষ খুঁজে পাবে তার ধর্মকে।


 

আইনস্টাইনের কাছে এই ধর্মীয় চেতনা প্রচলিত কোনো সীমার মধ্যে আবদ্ধ ছিল না। তিনি বিশ্বাস করতেন ধর্ম মানবতারই এক মূর্ত প্রকাশ। বিজ্ঞান আর ধর্মে কোনো প্রভেদ নেই, প্রভেদ শুধু দৃষ্টিভঙ্গিতে। বিজ্ঞান শুধু ‘কি’ তার উত্তর দিতে পারে ‘কেন’ বা ‘কী হওয়া উচিত’ সে উত্তর দেয়ার ক্ষমতা নেই। অপরদিকে ধর্ম শুধু মানুষের কাজ আর চিন্তার মূল্যায়ন করতে পারে মাত্র। সে হয়তো মানব জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ বলে দেয় বিজ্ঞান।…তাই ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গু আর বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ।


 

মানবতাবাদী আইনস্টাইন একদিকে শান্তির জন্য সংগ্রাম করছিলেন, অন্যদিকে প্রকৃতির রহস্য উদ্ঘাটনে একের পর এক তত্ত্ব আবিষ্কার করছিলেন। এই সময় তিনি প্রধানত অভিকর্ষ ও বিদ্যুৎ চৌম্বকক্ষেত্রের মিলন সাধনের প্রচেষ্টায় অতিবাহিত করেন। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার বিকাশের পথে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল কিন্তু এই তত্ত্বের সম্ভাব্যতাভিত্তিক চরিত্রে তার সম্পূর্ণ আস্থা ছিল না।

১৯৩৬ সালে হঠাৎ স্ত্রী এলসা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সুদীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এলসা ছিলেন আইনস্টাইনের যোগ্য সহধর্মিণী, তার সুখ-দুঃখের সঙ্গী। আইনস্টাইন সব বুঝতে পারেন কিন্তু অসহায়ের মতো তিনি শুধু চেয়ে থাকেন। অবশেষে ১৯৩৬ সালে চিরদিনের মতো প্রিয়তম আইনস্টাইনকে ছেড়ে চলে গেলেন এলসা। এই মানসিক আঘাতে সাময়িকভাবে ভেঙে পড়লেন আইনস্টাইন।

এই সময় পারমাণবিক শক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। এই শক্তির ভয়াবহতা সকলেই উপলব্ধি করতে পারছিলেন। পরীক্ষায় জানা গেল পারমাণবিক শক্তি সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক ধাতু হলো ইউরেনিয়াম। আর এই ইউরেনিয়াম তখন একমাত্র পাওয়া যায় কঙ্গো উপত্যকায়। কঙ্গো, বেলজিয়ামের অধিকারভুক্ত। বিজ্ঞানী মহল আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ল যদি জার্মানদের হাতে এই ইউরেনিয়াম পড়ে তাহলে তারা পরমাণু বোমা বানাতে মুহূর্ত মাত্র বিলম্ব করবে না। গোপনে সংবাদ পাওয়া যায় জার্মান বিজ্ঞানীরা নাকি জোর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।


 

আইনস্টাইন উপলব্ধি করলেন তার সমীকরণ প্রমাণিত হতে চলছে। সামান্য ভরের রূপান্তরের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে অপরিমেয় শক্তি। আইনস্টাইন লিখেছেন, ‘আমার জীবনকালে এই শক্তি পাওয়া যাবে ভাবতে পারিনি’।


 

এদিকে জার্মান বাহিনী দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষের বিজ্ঞানীরা উপলব্ধি করলেন যুদ্ধ জয় করতে গেলে অ্যাটম বোমা তৈরি করা দরকার এবং তা জার্মানির আগেই তৈরি করতে হবে। সকলে সমবেতভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে আবেদন জানাল। যদিও এই আবেদনপত্রে সই করেছিলেন আইনস্টাইন, আমেরিকায় পরমাণু বোমা তৈরির ব্যাপারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবেই তিনি জড়িত ছিলেন না।

শেষ দিকে তিনি চেয়েছিলেন এই গবেষণা বন্ধ হোক। তিনি বিজ্ঞানী মাক্স বোর্নকে বলেন, পরমাণু বোমা তৈরির জন্য আবেদনপত্রে আমার সই করাটাই সবচেয়ে বড় ভুল। জাপানে অ্যাটম বোমা ফেলার পর তার বিধ্বংসী রূপ দেখে বিচলিত আইনস্টাইন লিখেছেন,

পারমাণবিক শক্তি মানব জীবনে খুব তাড়াতাড়ি আশীর্বাদ হয়ে দেখা যাবে-সে রকম মনে হয় না। এই শক্তি মানবজাতির প্রকৃতই ভয়ের কারণ-হয়তো পরোক্ষভাবে তা ভালোই করবে। ভয় পেয়ে মানবজাতি তাদের পারস্পরিক সম্বন্ধের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা চালু করবে। ভয় ছাড়া মানুষ বোধহয় কখনোই শান্তির পথে অগ্রসর হতে পারবে না।

১৯৫০ সালে প্রকাশিত হলো তার নতুন তত্ত্ব A generalised theory of Gravitation। মহাকর্ষের সর্বজনীন তত্ত্ব। এত জটিল সেই তত্ত্ব, খুব কম সংখ্যক মানুষই তা উপলব্ধি করতে পারলেন।


 

যখন বিজ্ঞানীরা তাকে তার এই নতুন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে বললেন তিনি সকৌতুক বললেন, কুড়ি বছর পর এর আলোচনা করা যাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে উঠেছে নতুন ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল। আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হলো নতুন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য।


 

আইনস্টাইন জানালেন প্রকৃতির তত্ত্ব কিছু বুঝলেও মানুষ রাজনীতির কিছুই বোঝেন না। তাছাড়া রাষ্ট্রপতির পদ শুধু শোভাবর্ধনের জন্য। শোভা হলেও তার বিবেক যা মানতে পারবে না তাকে তিনি কখনোই সমর্থন করতে পারবেন না।


 

জীবন শেষ হয়ে আসছিল, এই সময়ে ইংরেজ মনীষী বার্ট্রান্ড রাসেলের অনুরোধে বিশ্ব শান্তির জন্য খসড়া লিখতে আরম্ভ করলেন। কিন্তু শেষ করতে পারলেন না। ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল তার জীবন শেষ হলো। তার ইচ্ছা অনুসারে মৃতদেহটা পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হলো। শোনা যায় পরীক্ষার জন্য তার ব্রেইন কোনো গবেষণাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সে সম্বন্ধে কেউই আর কোনো কথা প্রকাশ করেনি।


বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এর জীবনীঃ-

অনেক তো কথা হল, চলুন জানি তার জীবনী সম্পর্কে।

০১ জীবনবৃত্তান্ত
আইনস্টাইনের জীবনবৃত্তান্ত বহুল প্রচারিত। আইনস্টাইনই একমাত্র বিজ্ঞানী যাঁর এক বা একাধিক জীবনী পৃথিবীর প্রায় সবগুলো ভাষাতেই প্রকাশিত হয়েছে। (আইনস্টাইনের একটি বাংলা জীবনী মুক্তমনায় আছে এখানে)। তবে তাঁর প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক জীবনবৃত্তান্ত রচিত হয়েছিল ১৮৯৬ সালে তাঁর সতের বছর বয়সে তাঁর নিজের হাতেই। আইনস্টাইন তখন সুইজারল্যান্ডের আরাউ অঞ্চলের আগাউ স্কুল থেকে ফেডারেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তির জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে লেখা তার জীবনবৃত্তান্ত ছিল এরকম :

১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ উল্‌ম শহরে আমার জন্ম। এক বছর বয়সে আমি মিউনিখে আসি। ১৮৯৪-৯৫ সালের শীতকাল পর্যন্ত আমি মিউনিখেই ছিলাম। সেখানেই আমার ইলিমেন্টারি স্কুল, তারপর লুটপোল্ড সেকেন্ডারি স্কুলে ক্লাস সেভেনে উঠেছিলাম, কিন্তু শেষ করা হয়নি। তার আগেই আমি মিলানে চলে গিয়েছিলাম এবং সেখানেই ছিলাম গত বছরের শরৎকাল পর্যন্ত। নিজে নিজেই পড়াশোনা করেছি মিলানে। তারপর গত বছর শরৎকাল শেষে আমি আরাউ এর ক্যান্টোনাল স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেছি। করছি। বর্তমানে আমি গ্রাজুয়েশান পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে ফেডারেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করা।

অনেক বছর পর ১৯৩২ সালে আইনস্টাইন আরেকবার নিজের হাতে লিখেছিলেন নিজের জীবনবৃত্তান্ত। তখন তিনি অনেক খ্যাতিমান। দশ বছর হয়ে গেছে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। সারা পৃথিবীর বিজ্ঞান-জগতে তাঁর নাম-ডাক। ১৮৫টি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এসময় গ্যোয়েটে’র মৃত্যু শতবার্ষিকী উপলক্ষে জার্মান একাডেমি অব সায়েন্টিস্ট আইনস্টাইনকে একাডেমির মেম্বারশিপ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইনস্টাইনও সম্মত হয়েছেন। কিন্তু সম্মত হয়েই পড়লেন বিপদে। একাডেমির চেয়ারম্যান ইয়া লম্বা এক ফরম ধরিয়ে দিলেন আইনস্টাইনকে। প্রায় পুরো জীবনবৃত্তান্ত লিখতে হলো ওই ফরম পূরণ করতে গিয়ে। ধৈর্য সহকারে আইনস্টাইন লিখলেন সব – জন্ম, স্কুল, প্যাটেন্ট অফিসের টেকনিক্যাল কাজ, উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা, প্রফেশনাল সোসাইটির মেম্বারশিপ সব লিখলেন। কিন্তু নোবেল পুরষ্কার পাবার কথা উল্লেখ করেন নি কোথাও। তবে কি নোবেল পুরষ্কারের গুরুত্ব তাঁর কাছে খুব একটা ছিল না? নাকি তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন নোবেল প্রাপ্তির কথা? এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা যায় নি কখনো।

০২ জীবনের লক্ষ্য
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, জীবনের লক্ষ্য ইত্যাদি বিষয়ে আমরা অনেকেই রচনা লিখেছি স্কুলে। আইনস্টাইনকেও লিখতে হয়েছিল। সেই ষোল বছর বয়সেই আইনস্টাইন জীবনের লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছিলেন এভাবেঃ

যদি স্কুল গ্রাজুয়েশান পরীক্ষা পাশ করতে পারি, জুরিখের ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভর্তি হবো। সেখানে চার বছর পড়াশোনা করবো গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে। ভবিষ্যতে আমি নিজেকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের তত্ত্বীয় শাখার অধ্যাপক হিসেবে দেখতে চাই। তার পেছনে অবশ্য কারণ আছে। প্রধান কারণ হলো তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান ও গাণিতিক ভাবনাগুলো অনেক বেশি স্বাধীনভাবে করা যায়। তার পরের কারণ হলো ব্যবহারিক বিজ্ঞানে আমার দক্ষতার অভাব। সর্বোপরি বৈজ্ঞানিক পেশায় এক ধরণের স্বাধীনতা আছে যা আমাকে ভীষণভাবে আগ্রহী করে তুলেছে সে পেশার প্রতি।

কিন্তু অনেক বছর অনেক কষ্টের পরে আইনস্টাইন যখন প্রফেসর হলেন দেখলেন যেরকম স্বাধীনতা তিনি আশা করেছিলেন সেরকম স্বাধীনতা নেই সেখানে। একাডেমিক জগতেও আছে পদোন্নতির ইঁদুর-দৌড়, ‘পাবলিশ অর পেরিশ’ এর খড়গ। ১৯২৭ সালে বার্লিন ইউনিভার্সিটিতে ম্যাক্স প্ল্যাংকের প্রফেসর পদ খালি হলে সেই পদ লাভের জন্য প্রফেসরদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তখন আইনস্টাইন তাঁর বন্ধু পল ইরেনফেস্টকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিলেন : – আমি ভাই ওসবে নেই। বড় বড় মস্তিষ্কের প্রতিযোগিতায় যাবার আর কোন ইচ্ছেই আমার নেই। এরকম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ আমার কাছে অর্থ বা ক্ষমতা লাভের জন্য যুদ্ধ করার মতই হীন মনে হয়। প্যাটেন্ট অফিসে কাজ করার সময় পদোন্নতির জন্য দু’বার দরখাস্ত করেছিলেন আইনস্টাইন। একবারও সফল হননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার পর আর কখনো পদোন্নতির জন্য আবেদন করেন নি কোথাও। গবেষণা-পত্র প্রকাশের প্রচলিত পদ্ধতিও পছন্দ করেন নি তিনি। আমেরিকায় যাবার পর ফিজিক্যাল রিভিউতে একটা পেপার পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু যখন দেখলেন রিভিউয়াররা তাঁকে পরামর্শ দিচ্ছেন কোন্‌ প্রসঙ্গ কীভাবে লেখা উচিত – আইনস্টাইন বিরক্ত হলেন। তিনি আর কখনো কোন গবেষণা-পত্র প্রকাশ করেন নি ফিজিক্যাল রিভিউ।

০৩ প্রথম সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি
১৯০৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব জেনেভা’র ৩৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একশ জন উদীয়মান প্রতিভাকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আইনস্টাইনের নামও সেই একশ’ জনের তালিকায় ছিল। আইনস্টাইন এসবের কিছুই জানতেন না। তাঁর প্রধান আবিষ্কারের পেপারগুলো যদিও প্রকাশিত হয়েছে ১৯০৫ সালে কিন্তু তখনো ওগুলো তেমন আলোড়ন তৈরি করে নি। আইনস্টাইন তখনো প্যাটেন্ট অফিসেই কাজ করছেন। এসময় একটা বড় খামে অনেক কাগজ-পত্র এসে পৌঁছালো তাঁর অফিসে। আইনস্টাইন খাম খুলে দেখেন বেশ সুদৃশ্য টাইপে ছাপানো বেশ কিছু কাগজপত্র। তাঁর মনে হলো ল্যাটিন ভাষায় লেখা কোন বিজ্ঞাপন। অপ্রয়োজনীয় মনে করে তিনি না পড়েই কাগজ-পত্র সহ খামটি ফেলে দিলেন বাতিল কাগজের স্তুপে। ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আইনস্টাইনের কাছ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে আইনস্টাইনের বন্ধু লুসিয়েন কাফানের সাথে যোগাযোগ করলো। লুসিয়েন জরুরি ভিত্তিতে আইনস্টাইনকে ডেকে নিয়ে গেলেন জেনেভায় নির্দিষ্ট দিনে, কিন্তু ইউনিভার্সিটির ডিগ্রির ব্যাপারে কিছুই জানাননি। জেনেভায় গিয়ে আইনস্টাইন দেখলেন জুরিখ ইউনিভার্সিটির অনেক প্রফেসর সেখানে উপস্থিত। জানা গেলো জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের সম্মান-সূচক ডিগ্রি দিচ্ছেন। আইনস্টাইনও যে ডিগ্রি পাচ্ছেন তা তাঁরা জানেন, কিন্তু আইনস্টাইন নিজে তা জানেন না। যখন জানলেন তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। কারণ সমাবর্তনের একাডেমিক শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিক পোশাক তার নেই। তিনি ভাবলেন কেটে পড়বেন, ডিগ্রি নেবেন না। কিন্তু তাঁর বন্ধু ও প্রফেসররা তা হতে দিলেন না। আইনস্টাইন শোভাযাত্রায় অংশ নিলেন তাঁর আটপৌরে কুচকানো কোট আর খড়ের টুপি পরে। পুরো সমাবর্তনে আইনস্টাইনই ছিলেন একমাত্র অনানুষ্ঠানিক। আরো মজার বিষয় হলো – আইনস্টাইনের এই প্রথম সম্মান-সূচক ডক্টরেট ডিগ্রির সনদে তাঁর নামের বানান ছিল ভুল। প্যাঁচানো অক্ষরের ফরাসি ভাষায় তাঁর নাম লেখা ছিল ‘আলবার্ট টাইনস্টাইন’।

আইনস্টাইন জীবনে অসংখ্য সম্মাননা, পুরষ্কার, সনদ-পত্র পেয়েছেন। কিন্তু একটি মাত্র সনদ ছাড়া আর কোন সনদই তিনি বাঁধিয়ে রাখেন নি বা প্রদর্শন করেন নি। সবগুলো সম্মাননা সনদই তিনি ফেলে রাখতেন ঘরের এক কোণে, অনেকটা লুকিয়ে। নোবেল পুরষ্কারের সনদও লুকিয়ে ছিল সেই নিভৃত কোণে। যে সনদটি তিনি তাঁর অফিসের দেয়ালে বাঁধিয়ে রেখেছিলেন তা ছিলো ১৯৩৬ সালে বার্ন সায়েন্টিফিক সোসাইটি যে ডিপ্লোমা সনদটি তাঁকে পাঠিয়েছিল। এই সনদটি পেয়ে তিনি এত খুশি হয়েছিলেন যে তাঁর উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছিল বার্ন সায়েন্টিফিক সোসাইটিকে লেখা তাঁর ধন্যবাদ পত্রে ঃ “বার্ন সায়েন্টিফিক সোসাইটি যে আমাকে মনে রেখেছে তার জন্য আমি যে কী পরিমাণ খুশি হয়েছি তা বোঝানোর ভাষা আমার নেই। এই সনদটি মনে হচ্ছে আমার অনেক দিন আগে ফেলে আসা যৌবনের স্মৃতি। মনে হচ্ছে আমি যেন ফিরে যাচ্ছি আমার যৌবনের সেইসব বিকেলগুলোতে”। আইনস্টাইন তখন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কিন্তু মন যে পড়ে আছে ইউরোপে যেখানে তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা, সংগ্রাম, সাফল্য।

০৪ বিজ্ঞান ঈশ্বরের দান!
যে কোন বড় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে ঈশ্বর-বিশ্বাসীরা শুরুতে ‘ঈশ্বর-বিরোধী’ কাজকর্ম বলে অপপ্রচার চালিয়ে বাধাগ্রস্ত করে তুলতে সচেষ্ট হয়। তাতে ব্যর্থ হবার পর উল্টোগীত গাইতে শুরু করে এই বলে যে এসব আবিষ্কারের কথা ধর্ম-গ্রন্থগুলোতে কত আগে থেকেই গ্রন্থিত হয়ে আছে। এসব আবিষ্কার তো ওখান থেকেই টুকলিফাই করা। আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটি নিয়ে এরকম কচলানো শুরু হয়েছিল আইনস্টাইনের জীবদ্দশাতেই। আইনস্টাইন প্রিন্সটনের এডভান্সড রিসার্চ সেন্টারে অধিষ্ঠিত হবার পর মিডিয়ার কল্যাণে দ্রুত পরিচিতি লাভ করেন সবার কাছে। প্রতিদিন শত শত চিঠি আসতে থাকে তাঁর কাছে। কত রকম আলোচনা, সমালোচনা, আবদার, প্রশ্ন, অনুরোধ, ভালোবাসা, ঘৃণা সেসব প্রশ্ন জুড়ে। আমেরিকান ইহুদিরা প্রচারে লেগে গেলেন যে আইনস্টাইন তাঁদেরই লোক। আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটির ওপর যে তাঁদের ধর্মের বিরাট প্রভাব আছে তা ব্যাখ্যা করার জন্য রাবাইরা উঠেপড়ে লাগলেন। শিকাগোর এক রাবাই “দি রিলিজিয়াস ইমপ্লিক্যাশান্‌স অব দি থিওরি অব রিলেটিভিটি” শিরোনামে এক লেকচার তৈরি করে ফেললেন। তাতে আইনস্টাইনের স্বীকৃতি লাভ করার জন্য এই রাবাই আইনস্টাইনকে চিঠি লিখে জানালেন তাঁর লেকচারের বিষয়ে। ধর্মের
স্বার্থে বিজ্ঞানের অপব্যাখ্যায় আইনস্টাইন ভীষণ বিরক্ত হতেন। ১৯৩৯ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি রাবাইকে চিঠি লিখে জানালেন “আমি বিশ্বাস করি না যে আমার আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মূল ধারণার কোন অংশই ধর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে দাবি করা যায়। কারণ ধর্মের ধারণা বিজ্ঞানের ধারণা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যৌক্তিক পৃথিবীতে শুধুমাত্র সাধারণ যুক্তির ধাপগুলো সম্পন্ন করেই এক কাজের সাথে অন্য কাজের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়, তাতে ধর্মকে টেনে আনার দরকার হয় না”।

০৫ ভাগ্যবান আইনস্টাইন
আইনস্টাইনের ৫০তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে কার্ড পাঠিয়েছেন সিগমন্ড ফ্রয়েড। কার্ডে ফ্রয়েড আইনস্টাইনকে সম্বোধন করেছেন ‘ইউ লাকি ওয়ান’ বলে। আইনস্টাইন বুঝতে পারছিলেন না ফ্রয়েডের মত খ্যাতিমান মানুষ কেন তাঁকে ভাগ্যবান বলে মনে করবেন? ফ্রয়েডকে চিঠি লিখলেন আইনস্টাইন – “মহোদয়, আমাকে মনে রাখার জন্য ধন্যবাদ। আপনি আমার ভাগ্যের উপর এত জোর দিচ্ছেন কেন? আপনি যেখান এত মানুষের মনের খবর জানতে পারেন, সমগ্র মানবজাতি যেখানে আপনাকে মনে রাখছে – সেখানে আপনার তুলনায় আমি কীভাবে ভাগ্যবান হই”? উত্তরে ফ্রয়েড লিখলেন – “পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কে যাদের গভীর ধারণা নেই তারা কখনো সাহস পাবে না তোমার কাজের সমালোচনা করার, অথচ আমাকে দেখো – মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে যারা কিছুই জানে না তারাও আমার কাজের বড় সমালোচক। এক্ষেত্রে তুমি ভাগ্যবান নও”?

“আলবার্ট আইনস্টাইন” এর জীবনের কিছু মজার ঘটনাঃ-

আইনস্টাইন সাহেবের লাইফে অনেক মজার মজার ঘটনা আছে। যদিও ব্যাক্তি আইনস্টাইন কে আমার যতটা না কঠীন মনে হত আমার কাছে, কয়দিন ধরে উনার উপর গবেষনা করে অনেক সহজ লোক মনে হচ্ছে। যদিও ব্যাক্তি অনির্ণেয় উনার বিশ্বখ্যাত আপেক্ষিক তত্ত্বের ক টা ও বুঝতে পারি নি। কিন্তু আজ উনার জীবনের কিছু মজার ঘটনা আপনাদের কে জানাব।

  • ১. আইনস্টাইন বিশ্বখ্যাত তাঁর আপেক্ষিক তত্ত্বের জন্য। কিন্তু কে কী ভাবত তাঁর আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে? জার্মান বা ফরাসীরা? ১৯৩০-এর দশকে সরবোনে (Sorbonne) বক্তৃতা দেওয়ার সময় এ বিষয়ে বলেন, ‘যদি আমার আপেক্ষিক তত্ত্ব সত্য প্রমাণিত হয়, তবে জার্মানি আমাকে জার্মান হিসেবে দাবি করবে। আর ফ্রান্স বলবে যে আমি পুরো বিশ্বের নাগরিক। কিন্তু যদি তত্ত্বটা ভুল প্রমাণিত হয়, তবে ফ্রান্স বলবে, আমি একজন জার্মান এবং জার্মানি বলবে আমি হলাম ইহুদি।’
  • ২. ১৯২১ সালে ফিলিস্তিন ভ্রমণে বেরিয়েছেন আইনস্টাইন। সেখানে ‘যুব সংঘ’ নামের এক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন ২২ বছর বয়সী এক তরুণী। সমাজের নানা বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন আইনস্টাইন। একবার আইনস্টাইন তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা, এখানে নারী-পুরুষে সম্পর্ক কেমন?’ এ প্রশ্নশুনে ওই তরুণী লজ্জায় পড়ে গেলেন। তিনি বললেন, ‘দেখুন অধ্যাপক, এখানে কিন্তু একজন পুরুষের একটিই স্ত্রী।’ একটু হেসে তাঁর হাতখানা ধরে আইনস্টাইন বললেন, ‘না, না। আমার প্রশ্নটা ওভাবে নিয়ো না। আমরা পদার্থবিজ্ঞানীরা “সম্পর্ক” কথাটা দিয়ে সহজ কিছুকে বোঝাই। আমি আসলে জানতে চেয়েছি, এখানে কতজন নারী আর কতজন পুরুষ মানুষ।’
  • ৩. মানুষ মাত্রই কি ভুল হয়? নিজের ভুলভ্রান্তি নিয়ে কী ভাবতেন আইনস্টাইন? ১৯৩৫ সালে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য আপনার কী কী দরকার?’ আইনস্টাইন বললেন, ‘একটা ডেস্ক, কিছু কাগজ আর একটা পেনসিল। সঙ্গে দরকার বড় একটা ডাস্টবিন, যেখানে আমার সব ভুল করা বা ভুলে ভরা কাগজগুলো ফেলব!’
  • ৪. আইনস্টাইনকে প্রাচীন গণিতের ইতিহাসবিদ অটো নিউগেব্যুর বলেছেন, ‘কিংবদন্তি’। কিন্তু এই কিংবদন্তি মানুষটি তুলনামূলক দেরিতে কথা বলতে শেখেন। ফলে তাঁর মা-বাবা খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। তো, একদিন রাতে খাবার টেবিলে সবাই আছেন। আইনস্টাইনও। হঠাৎ তিনি চিত্কার করে বললেন, ‘এই স্যুপটা খুবই গরম।’ উহ্, হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন মা-বাবা। ছেলের মুখে প্রথম বুলি শুনে তাঁরা আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এর আগে কেন তুমি কোনো কথা বলোনি?’ জবাবে আইনস্টাইন বললেন, ‘কারণ, এর আগে সবকিছু ঠিকঠাক ছিল!’
  • ৫. অনেকের কাছে অঙ্কের সমার্থক শব্দ আতঙ্ক। তো, একবার ১৫ বছর বয়সী এক তরুণী আইনস্টাইনের কাছে সাহায্য চাইল। গণিতের ওপর বাড়ির কাজ বা হোম ওয়ার্ক সে সঠিকভাবে করতে পারছিল না। তরুণীর কাছে অঙ্ক এমনিতেই আতঙ্কের নাম। আইনস্টাইন ওই তরুণীকে বলেছিলেন,‘গণিতের সমস্যা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করো না। তোমার কাছে গণিত যতটা কঠিন, আমার কাছে গণিত তার চেয়েও কঠিন।’
  • ৬. একবার এক ছাত্র আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করল, ‘গত বছর পরীক্ষায় যেসব প্রশ্ন পড়েছিল, এবারের পরীক্ষায়ও ঠিকঠিক ওই সব প্রশ্নই পড়েছে।’ ‘ঠিক বলেছ।’ আইনস্টাইন বললেন, ‘কিন্তু এ বছরের উত্তরগুলো আগেরবারের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা!’
  • ৭. একবার এক অনুষ্ঠানে আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আপনি একটু সহজ করে আপনার তত্ত্বটা আমাদের বোঝাবেন?’ আইনস্টাইন তখন এই গল্পটা শোনালেন। আমি একবার বন্ধুর সঙ্গে হাঁটছিলাম। বন্ধুটি ছিল অন্ধ। আমি বললাম, দুধ পানকরতে ইচ্ছা করছে। ‘দুধ?’ বন্ধুটি বলল, ‘পান করা বুঝি, কিন্তু দুধ কী জিনিস?’ ‘একটা সাদা তরল পদার্থ।’ বললাম আমি। ‘তরল আমি বুঝি, কিন্তু সাদা জিনিসটা কী?’ ‘বকের পালকের রং।’ ‘পালক আমি বুঝি, কিন্তু বক কী?’ ‘ঘাড় কুঁজো বা বাঁকানো ঘাড়ের এক পাখি।’ ‘ঘাড় সে তো বুঝি। কিন্তু এই কুঁজো কথাটার মানে কী?’ এরপর আর ধৈর্য থাকে, বলুন! আমি তার হাতটা ধরে এক ঝটকায় টানটান করলাম। বললাম, ‘এটা এখন একদম সোজা, তাই না। তারপর ধরো, কনুই বরাবর এটা ভেঙে দিলাম। এবার তোমার হাতটা যেমন আছে সেটাকেই কুঁজো বা বাঁকানো বলে, বুঝলে?’ ‘আহ্!’ অন্ধ বন্ধু বলল, ‘এবার বুঝেছি, দুধ বলতে তুমি কী বুঝিয়েছ।’
  • ৮. এক সহকর্মী আইনস্টাইনের কাছে একবার তাঁর টেলিফোন নম্বরটা চাইলেন। তখন আইনস্টাইন একটা টেলিফোন বই খুঁজেবের করলেন এবং সে বইতে তাঁর নম্বরটা খুঁজতে লাগলেন। তখন সহকর্মীটি বললেন,‘কী ব্যাপার, নিজের টেলিফোন নম্বরটাও মনে নেই আপনার?’ আইনস্টাইন বললেন, ‘না। তার দরকারই বা কী? যেটা আপনি বইতে পাবেন, সে তথ্যটা মুখস্থ করে মস্তিষ্ক খরচ করবেন কেন?’
  • ৯. ১৯৩১ সালে চার্লি চাপলিন আমন্ত্রণ জানালেন আইনস্টাইনকে। তখন সিটি লাইটস সিনেমার স্কিনিং চলছিল চাপলিনের। তো যখন চাপলিন ও আইনস্টাইনশহরের পথ ধরে যাচ্ছিলেন, অনেক মানুষ ভিড় জমায়। চাপলিন আইনস্টাইনকে বললেন,‘সবাই আমাকে সহজেই বোঝে। এজন্যই আমার যত জনপ্রিয়তা। তা আপনাকে মানুষ এত পছন্দ করে কেন, বলতে পারেন?’ ‘আসলে’, আইনস্টাইন বলছেন, ‘কেউ আমাকে সহজে বুঝতেই পারে না বলে আমাকে এত বেশি পছন্দ করে!’
  • ১০. স্বামী সম্পর্কে কেমন ধারণা ছিল আইনস্টাইনের স্ত্রীর? তাঁর স্ত্রীকেএকবার জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব কি বুঝতে পারেন?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘না, কিন্তু আমার স্বামীকে বুঝি। আমি জানি, তাঁকে বিশ্বাস করা যায়।’
  • ১১. বিখ্যাত ভাষ্কর জেকব এপস্টিন একবার আইনস্টাইনের একটি আবক্ষ মূর্তি খোদাই করছিলেন। আইনস্টাইন নিজেই মডেল হয়ে ধৈর্য ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে শিল্পীকে সাহায্য করতেন। সে সময় একদিন তিনি জেকবকে বলেন,’’ প্রায় শ’খানেক বিজ্ঞানী বই লিখে আমার আপেক্ষিকতা তত্ত্বটি ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। আমার থিওরী যদি ভুল হয়, তবে এতজনের দরকারটা কী? একজন বললেই যথেষ্ট।
  • ১২. একবার বেলজিয়ামের রাণী আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানালেন তাঁর দেশ সফরের। নির্দিষ্ট দিনে আইনস্টাইনকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাবার জন্য রেল স্টেশনে হাজির হল গাড়ির বহর। কিন্তু কোথায় কী? রেল স্টেশনে আইনস্টাইনকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। ফিরে চলল গাড়্রির বহর রাজপ্রাসাদের দিকে। কিছুক্ষণ পর সাদাসিধে পোশাকে বেহালা বাজাতে বাজাতে রাজপ্রাসাদে হাজির হলেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। রাণী ব্যাপারটাতে লজ্জিত হলেন। সাথে সাথে ক্ষমা প্রার্থণা করে জানালেন যে, বিজ্ঞানীকে নিয়ে আসার জন্য গাড়ি বহর রেল স্টেশনে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে ফিরে এসেছে। আইনস্টাইন বললেন,’’আমি ইচ্ছে করেই গাড়ি বহরকে এড়িয়ে গেছি। আর পায়ে হেঁটে বেহালা বাজাতে বাজাতে এসেছি। যদি আপনার ঐ রাজকীয় গাড়িতে আসতাম, তবে কি এভাবে বেহালা বাজাতে পারতাম? সাধারণ মানুষের মত শহরটাকে দেখে নিতে পারতাম?’’ এমনই সহজ সরল আর সাধারণ ছিলেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। এত বড় বিজ্ঞানী অথচ মনে এতটুকু অহংকার ছিল না।
  • ১৩. আইনস্টাইন যে কত সহজ সরল ছিলেন তা বোঝা যায় তাঁর আরেকটি মজার ঘটনায়। আপেক্ষিকতা তত্ব আবিষ্কার করে তিনি তখন বিখ্যাত ও বিতর্কিত। সত্যি কথা বলতে কি, বিজ্ঞানী-অবিজ্ঞানী কারোর মগজের এন্টেনাই ব্যাপারটা ক্যাচ করতে পারছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা সেমিনারে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর উদ্ভাবিত তত্ত্বটি বোঝাতে লেকচার দিতে যেতেন। প্রায় সব সেমিনারে তিনি একই ধরনের আলোচনা করতেন। একবার এমনি এক সেমিনারে তিনি আমন্ত্রিত হয়েছেন, লেকচার দেবার জন্য। পথিমধ্যে তাঁর ড্রাইভার করে বসল এক আজব আবদার।বলল, ‘’স্যার, আপনার লেকচারগুলু শুনতে শুনতে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। আজ একদিনের জন্য আমি আইনস্টাইন সেজে সেমিনারে বক্তব্য চাই।‘’ মজার মানুষ আইনস্টাইনেরও কথাটা খুব মনে ধরল। তিনি এক কথায় রাজি। দেখাই যাক না, ব্যাপারটা কী হয়? তো, ড্রাইভার আইনস্টাইন সেজে অনুষ্ঠানে গেল বক্তব্য দিতে আর স্বয়ং আইনস্টাইন দর্শক সারিতে বসে রইলেন আইনস্টাইনেরই ড্রাইভার হয়ে। তখন তো আর মিডিয়ার এত দৌরাত্ন্য ছিল না। তাই ব্যপারটা কেউ বুঝতে পারল না। আইনস্টাইনরূপী ড্রাইভার মঞ্চে বক্তব্য রাখল এবং চমৎকার বক্তব্য রাখল।দর্শক সারিতে বসে মুগ্ধ আইনস্টাইন বার বার হাত তালি দিতে লাগলেন।অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত একজন আইনস্টাইনের ড্রাইভারের কাছে যেয়ে বললেন, ‘’ আপনার বক্তব্যটি আমার খুব ভাল লেগেছে। কিন্তু কি জানেন, আমি এই অমুক অমুক বিষয়গুলু একদম বুঝতে পারিনি। আপনি কি অনুগ্রহ করে আমাকে বিষয়গুলু বুঝিয়ে দেবেন?’’ আইনস্টাইনের ড্রাইভার বিন্দু মাত্র না ঘাবড়ে উত্তর দিল,’’ওহ! এই ব্যাপার? এই ব্যাপারটা তো আমার ড্রাইভারই বুঝিয়ে দিতে পারবে। চলুন তার কাছেই যাই।
  • ১৪. একবার আইনস্টাইনকে সফলতা লাভের একটি গাণিতিক ফর্মুলা দিতে বলা হল। তিনি বলেছিলেন,’’ X+Y+Z=A, যেখানে X=কাজ, Y=খেলাধুলা আর A=সফলতা।‘’ ‘’আর মানে Z কী?’’ আবারও জিজ্ঞেস করা হল তাঁকে। ‘’তোমার মুখ বন্ধ রাখা‘’, আইনস্টাইনের উত্তর।
  • ১৫. আইনস্টাইন তাঁর জটিল আপেক্ষিকতার তত্ত্বের একটি সহজ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন ঠিক এইভাবে,’’যখন তুমি একজন সুন্দরী মহিলার পাশে বসে থাকো তখন দু’ঘণ্টাকে মনে হয় দু’ মিনিট; আর যখন তুমি দু’ মিনিট গরম চুলার পাশে বসে থাকো তখন দু’মিনিটকে মনে হয় দু ঘণ্টা। এটাই হল আপেক্ষিকতাবাদ।‘’ আর রেডিও সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘’তুমি টেলিগ্রাফের তার দেখেছ। মনে করো, এটা লম্বা, অনেক লম্বা একটা বিড়াল।তুমি নিউইয়র্কে বসে এর লেজে টান দেবে, ওদিকে লস এঞ্জেলেসে এর মাথা মিউ মিউ করে উঠবে।ব্যাপারটা বুঝতে পারছ? বেতার ঠিক এভাবেই কাজ করে। তুমি এদিকে ইশারা দাও, ওদিকে সাড়া পড়ে। পার্থক্য হল এই বেতারের ক্ষেত্রে বিড়াল বলে কিছু উপস্থিত নেই।
  • ১৬. এত সুন্দর ব্যাখ্যা যিনি দিতে পারেন, তিনি কিন্তু অনেক সময় জীবনের সহজ ব্যাপারগুলো বুঝতে পারতেন না। একবার আইনস্টাইন বাড়ি বানালেন। একদিন তিনি বাড়িটা কেমন হল তা দেখতে গেলেন। ঘুরে ঘুরে সব দেখে তিনি জানতে চাইলেন, তাঁর ছোট্ট বিড়ালছানাটি ঘরে ঢুকবে কি করে? তার জন্য তো কোন আলাদা ছোট দরজা বানানো হয় নি। আসলে যাঁরা অনেক বড় মানুষ, তাঁরা সব সময় বড় বড় চিন্তায় মগ্ন থাকেন তো, তাই ছোট ছোট ব্যাপারগুলো তাঁরা অনেক সময় বুঝতে পারেন না। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনও এই ছোট্ট ব্যাপারটা কিছুতেই বুঝতে পারলেন না।অবশেষে তাঁকে খুশি করার জন্য বড় দরজার পাশে আরেকটি ছোট দরজা তৈরি করে দেওয়া হল, যেন তাঁর আদরের বেড়ালছানাটি নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত বেড়ালছানাটি কোন দরজা ব্যবহার করত তা আইনস্টাইনই ভাল বলতে পারবেন।
  • ১৭. গুজব আছে, সুন্দরী অভিনেত্রী মেরিলিন মনেরো আইনস্টাইনের প্রতি দুর্বল ছিলেন। তাই একদিন মনেরো আইনস্টাইনকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন এইভাবে, ‘’চলুন না, আমরা বিয়ে করে ফেলি? তাহলে আমাদের সন্তানেরা হবে সৌন্দর্য ও জ্ঞানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। ওরা দেখতে আমার মত আর বুদ্ধিতে আপনার মত।‘’ আইনস্টাইন তৎক্ষণাৎ বললেন, ‘’আর যদি উল্টোটা হয়? দেখতে আমার মত আর বুদ্ধিতে আপনার মত?‘’ এর উত্তরে মনেরো কী বলেছিলেন তা অবশ্য আমি অনেক চেষ্টা করেও জানতে পারিনি।
  • ১৮. তিন হাজার শব্দের মধ্যে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব যে সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা করতে পারবে, তার জন্য মোটা অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করে সায়েন্টিফিক আমেরিকান। ‘বন্ধুদের মধ্যে কেবল আমিই অংশ নিইনি। আমার বিশ্বাস হয়নি তিন হাজার শব্দে এটা ভালো বোঝাতে পারতাম আমি’−মন্তব্য করেন আইনস্টাইন।
  • ১৯. কাজে যাওয়ার আগে প্রায়ই ভালো পোশাক পরে যাওয়ার আইনস্টাইনকে অনুরোধ-উপরোধ করতেন তাঁর স্ত্রী। বেশির ভাগ সময়ই তিনি জবাব দিতেন, ‘আমি কেন এটা করব? সেখানে সবাই আমাকে চেনে।’ তারপর আইনস্টাইনের প্রথম বড় ধরনের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় যখন ঘনিয়ে এল, তখন আবার তাঁকে একটু ভালো কাপড়চোপড় পরে সেখানে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন তাঁর স্ত্রী। এবার তিনি জবাব দিলেন, ‘কেন আমি এটা করব? সেখানে কেউই তো আমাকে চেনে না।’
  • ২০. ১৯৩৫ সালে প্রিন্সটনে পৌঁছানোর পর গবেষণার জন্য তাঁর কী কী প্রয়োজন হবে জিজ্ঞেস করা হলে আইনস্টাইন জানালেন, ‘একটি ডেস্ক, কিছু প্যাড, একটা পেন্সিল আর সব শেষে আমার ভুলগুলো ফেলার জন্য বিশাল একটা ময়লার ঝুড়ি।
  • ২১. মাউন্ট উইলসন মানমন্দির পরিদর্শনে গেছেন আইনস্টাইনের স্ত্রী। সেখানকার বিশাল অপটিক্যাল টেলিস্কোপটি ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম। এক জ্যোতির্বিদ তাঁকে জানালেন, এসব স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতির প্রধান কাজ মহাবিশ্বের বিস্তার, আকৃতি নির্ণয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলে উঠলেন, ‘ও! আমার স্বামী তো পুরোনো একটা খামের পেছনেই এটা করে।
  • ২২. অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথিদের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার চমৎকার এক বুদ্ধি বের করেন আইনস্টাইন। বাড়িতে কেউ আসার কিছু সময় পরই এক বাটি স্যুপ নিয়ে কামরায় ঢোকে এক গৃহপরিচারক। যদি তিনি এটা গ্রহণ করেন, তবে অতিথি ধরে নেন তিনি এখন খাবেন এবং মানে মানে কেটে পড়াই তাঁর জন্য শ্রেয়। অন্যদিকে আইনস্টাইনের যদি কথা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা হয়, তবে স্যুপটা এক পাশে সরিয়ে দেন, যেন-বা এটা এখানে ছিলই না।
  • ২৩. ১৯৩০ সালে আমেরিকার উদ্দেশে বার্লিন ত্যাগ করেন আইনস্টাইন। বার্লিন রেলস্টেশনে পৌঁছেই স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলেন তিনি। যা হোক, একসময় খুঁজে পেলেন তাঁকে। তারপরই টিকিট জোড়া হারিয়ে বসলেন। শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেল তাও, আর এভাবেই শুরু হলো তাঁর দ্বিতীয় আমেরিকা যাত্রা।
  • ২৪. মাউন্ট উইলসন মানমন্দির পরিদর্শনে গেছেন আইনস্টাইনের স্ত্রী। সেখানকার বিশাল অপটিক্যাল টেলিস্কোপটি ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম। এক জ্যোতির্বিদ তাঁকে জানালেন, এসব স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতির প্রধান কাজ মহাবিশ্বের বিস্তার, আকৃতি নির্ণয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলে উঠলেন, ‘ও! আমার স্বামী তো পুরোনো একটা খামের পেছনেই এটা করে।
  • ২৫. ভবিষ্যতে কী আছে? আলবার্ট আইনস্টাইনের কাছে একবার জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে নিরাসক্ত ভঙ্গিতে আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি কখনোই চিন্তা করি না। কারণ, এটা এমনিতেও তাড়াতাড়িই আসে।
  • ২৬. বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মেধাবীদের অন্যতম আলবার্ট আইনস্টাইন। আপেক্ষিকতা তত্ত্ব (The Theory of Relativity) আবিষ্কারের জন্য তিনি আমাদের কাছে সর্বাধিক পরিচিত। মজার ব্যাপার তিনি কিন্তু তাঁর এই আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরষ্কার পাননি। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীতে হাতে গোণা কয়েকজন মাত্র বিজ্ঞানী তাঁর এই তত্ত্বটি বুঝতে পারেন। কেউ যদি এই আপেক্ষিকতার তত্ত্বটি পড়ে বলে, ‘’বুঝেছি’’ তাহলে নাকি বুঝতে হবে যে, সে কিছুই বুঝেনি। তত্ত্বটি এত গোলমেলে যে, এটি না বোঝাই স্বাভাবিক, বুঝতে পারাটাই যেন অস্বাভাবিক। আর তাই হয়ত রয়েল সুইডিশ একাডেমির জুরিবোর্ড আইন্সটাইনের তত্ত্বটির নিগূঢ় অর্থটি বুঝাতে পারেনি। তাই সে বছর নোবেল পুরষ্কার আইনস্টাইনের কপালে না জুটলেও ১৯২১ সালে আলোক তড়িৎ ক্রিয়া (Photo Electric Effect) ব্যাখ্যা করে, তিনি পেলেন পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার।
  • ২৭. এক পার্টিতে আইনস্টাইনকে চিনতে না পেরে এক তরুণী প্রশ্ন করলেন, আপনি কি করেন?
    আইনস্টাইন উত্তর দিলেন, আমি পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র।
    তরুণী অবাক হয়ে বললেন, আপনি এখনও ছাত্র! আর আমি গত বছর পাশ করেছি..
  • ২৮. আইনস্টাইন এর মেয়ের বিয়ে। সবাই চার্চে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে উনি উনার মেয়েকে বললেন তুমি চার্চের দিকে যাও আমি ল্যাবে আমার কলমটা রেখে আসতাছি। মেয়ে অনেক বারন করা সত্বেও উনি গেলেন, ৩০ মিনিটের কথা বলে উনি যখন না এলেন তখন সবাই মিলে উনার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলেন। ৭ দিন পর উনার মেয়ে যখন বাসায় এসে মাকে জিজ্ঞাস করলো বাবা কোথায় তখন তার মা বলল ওই যে গেল আর আসে নাই। তখন উনি আইনস্টাইন এর খোজে ল্যাবে গেল। ল্যাবে গিয়ে দেখল যে তার বাবা একটা কলম নিয়ে বোর্ড এর সামনে গিয়ে কি জানি চিন্তা করছিল। মেয়ে বাবা কে বলল বাবা কি কর। তখন উনি বলল যে মা তুমি চার্চে যাও আমি এই কাজ টা ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ করে আসছি।
  • ৩০. আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মত রহস্যময়তার মধ্যেই মৃত্যু ঘটে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের। তাঁর মৃত্যুর সময় তিনি তাঁর মাতৃভাষা জার্মানে কিছু একটা বলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।তখন তাঁর পাশে থাকা আমেরিকান নার্স কথাটির বিন্দু বিসর্গও বুঝতে পারেনি। মৃত্যুর আগে শেষ কী কথা তিনি বলে গেছেন, তা আমাদের জানা হবে না আর কোন দিন।আইনস্টাইন সাহেবের লাইফে অনেক মজার মজার ঘটনা আছে। যদিও ব্যাক্তি আইনস্টাইন কে আমার যতটা না কঠীন মনে হত আমার কাছে, কয়দিন ধরে উনার উপর গবেষনা করে অনেক সহজ লোক মনে হচ্ছে। যদিও ব্যাক্তি অনির্ণেয় উনার বিশ্বখ্যাত আপেক্ষিক তত্ত্বের ক টা ও বুঝতে পারি নি। কিন্তু আজ উনার জীবনের কিছু মজার ঘটনা আপনাদের কে জানাব।

আলবার্ট আইনস্টাইনের বেহালা

একটি টেবিল, একটি চেয়ার, এক পাত্র ফল আর একটি বেহালা—একজন মানুষকে সুখী হতে আর কী চাই?’
—আলবার্ট আইনস্টাইন

  • ১৯৫২ সালে ইসরায়েলের প্রথম প্রেসিডেন্ট ওয়াইজম্যানের মৃত্যুর পর বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনকে অনুরোধ করা হলো ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য। তিনি সবিনয়ে প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দিলেন। তখন তাঁর বয়স ৭৩ বছর। তিনি আনুষ্ঠানিক প্রত্যাখ্যানপত্রে লিখলেন, ‘যথাযথভাবে মানুষের সঙ্গে মেলামেশার স্বাভাবিক প্রবণতা ও অভিজ্ঞতার অভাব আমার রয়েছে, তা ছাড়া আমি বৃদ্ধও হয়ে যাচ্ছি।’
    একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব আইনস্টাইনের পক্ষেই ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তিনি যা কখনো ফিরিয়ে দেননি, তা হচ্ছে বেহালা বাজানোর প্রস্তাব। তিনি টানা ৭০ বছর বেহালা বাজিয়ে গেছেন।
  • আইনস্টাইনের নিজের কথা, ‘আমি খুব সুখী। কারণ, কারও কাছে আমার কিছু চাওয়ার নেই। আমার টাকার প্রয়োজন নেই। পদক, খেতাব, উপাধি—আমার কাছে এসবের কোনো মানেই নেই। আমি প্রশংসার জন্যও লালায়িত নই। আমার নিজের কাজ ছাড়া একটি মাত্র বিষয় আমাকে আনন্দ দেয়, তা হচ্ছে আমার বেহালা।’
  • রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ১৯৩০-এর গ্রীষ্মের অপরাহে যখন আইনস্টাইনের দেখা, তখন তাঁদের আলাপের প্রায় পুরোটা জুড়েই ছিল সংগীতের কথা। রবীন্দ্রনাথ বললেন, পিয়ানো তাঁকে হতবাক করে আর বেহালা তাঁকে দেয় তৃপ্তি।
  • আইনস্টাইন বললেন, ব্যক্তির অনুভূতির সঠিক বিকাশ তখনই সম্ভব, যখন সংগীতের সমৃদ্ধ শৈল্পিক ঐতিহ্য মানুষের মনকে চালিয়ে নিয়ে যায়।
    আইনস্টাইনের মা পলিন আইনস্টাইন (১৮৫৮-১৯২০) ছিলেন সুশিক্ষিত পিয়ানোবাদক, তিনি চেয়েছেন ছেলেও সংগীত ভালোবাসুক। ছয় বছর বয়সে তিনি ছেলের হাতে বেহালা তুলে দিলেন। কিন্তু তখন বালকের বেহালা ভালো লাগেনি। তখন তাঁর পছন্দ কার্ড দিয়ে ঘর বানানো, জিগসো সমাধান। ১৩ বছর বয়সে যখন তিনি মোৎজার্ট শুনলেন, তাঁর ঘটল ভিন্ন এক উত্তরণ। তিনি আবার বেহালা হাতে নিলেন। হাত থেকে তা আর নামাননি। তিনি নিজের জন্য বেহালা বাজিয়েছেন, বাজিয়েছেন শ্রোতাদের জন্যও।
  • তাঁর খালাতো বোন ও দ্বিতীয় স্ত্রী এলমা লিখেছেন, ‘আলবার্ট যখন বেহালায় মোৎজার্টের সুর তুলেছে নিপুণ হাতে, আমি তখন ছোট্ট বালিকা, তার প্রেমে পড়ে যাই।’ …আলবার্ট পিয়ানোও বাজাতেন। তিনি যখন বিজ্ঞানের তত্ত্বের কথা ভাবতেন, সংগীত তাঁকে সাহায্য করত। পড়ার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে কিছুক্ষণ সুর তুলতেন, চিন্তাকে সমন্বিত করে আবার পড়ার ঘরে ফিরে যেতেন।
  • আইনস্টাইন ১৭তম জন্মদিনে সংগীত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষক মন্তব্য করেন, ‘আইনস্টাইন নামের একজন ছাত্র একাই সংগীতের প্রতি তার গভীর মমত্ব দেখিয়ে বিটোফেনের সোনাটা বাজিয়ে শুনিয়েছে।’ বার্লিন-জীবনে বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির চর্চা তিনি সমানতালে চালিয়ে গেছেন। কোয়ান্টাম তত্ত্বের জনক ম্যাক্স প্লাঙ্কের সঙ্গে বেহালা বাজিয়েছেন, ওঠাবসা করেছেন সংগীতগুরু ফ্রিৎজ ক্রিসলার আর আর্তুর শনাবেলের সঙ্গে।
  • ১৯২১-এ যখন আইনস্টাইন প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে এলেন, সংবাদপত্রের প্রতিবেদকেরা দেখতে পেলেন তাঁদের সামনে আলুথালু চুলের একজন দয়ালু মানুষ, পুরোনো দিনের পোশাক, বেহালার বাক্সটি হাতে; সফরে বের হওয়া পেশাদার শিল্পীরা যেমন করে পৃথিবীকে দেখেন, তিনিও তেমনি পৃথিবীকে দেখছেন।
  • বিটোফেন শেষ পর্যন্ত আইনস্টাইনকে বেশি টানেনি। তিনি আমৃত্যু মোৎজার্ট-মুগ্ধ ছিলেন, তাঁর প্রিয় অন্য সুরস্রষ্টাদের মধ্যে ছিলেন বাখ, শুবার্ট, ভিভালদি ও কোরেল্লি।
  • ১৯২৯-এ আইনস্টাইন যখন বেলজিয়াম সফরে এলেন, রানি এলিজাবেথ (সাবেক প্রিন্সেস এলিজাবেথ অব বাভারিয়া) তাঁর সঙ্গে বেহালা বাজানোর জন্য বিজ্ঞানীকে রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন। রানির বেহালাবাদনের সুখ্যাতি ছিল। তিনি নেদারল্যান্ডসে অক্সফোর্ডে বেহালা বাজিয়েছেন। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শরণার্থী সহায়তা তহবিল গড়তে গ্যাবি ক্যাসাডেসাসের সঙ্গে যুগলবন্দী বাজিয়েছেন।

১৯৫৫-এর ১৮ এপ্রিল আইনস্টাইনের মৃত্যু হয়। ১৭ ডিসেম্বর ১৯৫৫ প্রিন্সটন সিম্ফনি আইনস্টাইন স্মারক সংগীত বাদনের আয়োজন করে।

আইনস্টাইন বিভিন্ন ধরনের বেহালা বাজিয়েছেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে একসময় দেখলেন সহজভাবে বাঁ হাত আর তুলতে পারছেন না, তিনি বেহালা রেখে দিলেন।


 

বিল গেট্স যে সব জায়গায় টাকা ফুরাতে রাজী নন

বিল গেট্স যে সব জায়গায় টাকা ফুরাতে রাজী নন

ব্যক্তিগত কিছু ব্যয়ের বেলায় বেশ উদার বিল গেট্স। বাড়ির পেছনে ৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার ব্যয় করা এবং দামি গাড়ি পোর্শের পেছনে ৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার ঢেলে দেয়া কোনো ব্যাপার নয় বিল গেট্স এর কাছে। কিন্তু ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবহার্য জিনিসে তার হাতের তালু ফসকে টাকা বের হয়ে যাওয়া সহজ ব্যাপার নয়। বিল গেট্স প্রচুর টাকার মালিক হওয়া সত্ত্বেও বহু বছর ধরে সাধারণ বিমানে ভ্রমণ করেছেন।

বিল গেট্স নিজের ও পরিবারের ব্যবহারের জন্য একটি কর্পোরেট জেট বিমান কেনেন ১৯৯৭ সালে। তবে এখনও ব্যবসার কাজে প্রায়ই বাণিজ্যিক বিমানে সাধারণ যাত্রীদের আসনে ভ্রমণ করেন বিল গেট্স। আর ব্যক্তিগত বিমানে যাতায়াত করলে, এর খরচের টাকা কখনও মাইক্রোসফট থেকে নেন না বিল গেট্স।

”এটা এক ভালো দৃষ্টান্ত। বিমানে সাধারণ শ্রেণীতে টাকা কম লাগে। আর সাধারণ শ্রেণীতে গেলে যা, প্রথম শ্রেণীতে বসে ভ্রমণ করলেও তাই। আমি যদি মোটাসোটা বা অনেক লম্বা হতাম, তাহলে হয়তো এই আসন নিয়ে চিন্তাভাবনা করতাম। তাছাড়া এখানে আরেকটা ব্যপার রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ১৪ সপ্তাহ বিমানে ভ্রশন করতে হয়ে আমাকে। মাঝেমধ্যে সাধারণ শ্রেণীর টিকিট থাকা সত্ত্বেও আমাকে প্রথম শ্রেণীতে ডাকা হয়। কখনও এমন সুযোগ পেলে ফিরিয়ে দিই না।”

বিমানে যখন রাতভর ভ্রমণ করতে হয়, বিল গেট্স তখন প্রায়ই পেছনে গিয়ে একসারি খালি আসন খুঁজে বেড়ান। পেয়ে গেলে তো তোফা! হাত-পা ছড়িয়ে আরামে ঘুমানো যায়।

 

বিল গেট্স যে সব জায়গায় টাকা ফুরাতে রাজী নন

বিল গেট্স বলেছেন, “এ সুযোগ পেলে প্রথম শ্রেণীর আসনের চেয়ে অনেক বেশি আরামে ভ্রমণ করা যায়।” 

১৯৯২ সালের ঘটনা, বিল গেট্স তখন রীতিমতো বিলিওনিয়ার। বিমানে করে যাওয়ার সময় তার ব্যক্তিগত সহকারি মেয়েটি জানাল, ঘেমে যাচ্ছে সে। তার একটু সাহাস্য প্রয়োজন। বিল গেট্স সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ”আমি তোমাকে সাহায্য করার কে? রানী নাকি?”

সময়ের ব্যাপারে খুবই মিতব্যয়ী বিল গেট্স। মাইক্রোসফটের যাত্রালগ্ন থেকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে আসছেন বিল গেট্স। এ কারণে তার চলাফেরায় সব সময় একটা ব্যস্ততা থাকেই। কখনও যদি তার বিমান সকাল ১০টায় ছাড়ার কথা থাকে, অফিস থেকে তিনি বেরোবেন ৯টা ৫০ মিনিটে। দ্রুতবেগে ছুটবেন বিমান বন্দরের দিকে। প্রায়ই এমন পরিস্থিতি হয়, বিমানের দরজা বন্ধ করার ঠিক পূর্ব মুহুর্তে গিয়ে হাজির হন বিল গেট্স। ঝুঁকি নেবেন, তবু আগে গিয়ে বসে থেকে সময় অপচয় করবেন না।

সময় বাঁচানো প্রসঙ্গে বিল গেট্স বলেছেন:

”যখন কোনো সভায় যোগ দিতে যাই, নির্দিষ্ট কিছু বিষয় থাকে মাথায়। কাজেই খুব বেশি কথা বলে সময় নষ্ট করতে হয় না। বিশেষ করে যে কলিগদের সম্পর্কে খুব ভালো করে জানি, তাদের সঙ্গে বৈঠকে সময় অপচয় হয় না। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়াচ্ছে, কাজেই সময় নষ্ট করব কেন?”

মাইক্রোসফটের অন্যতম সেরা প্রোগ্রামার চালর্স সিমোনি বলেছেন, ”বিল গেট্স কখনও একটা জিনিস দুবার ব্যাখ্যা করেন না।”

বিল গেট্স বলেন:

”যেহেতু কাজ অনুযায়ী দৈনন্দিন জীবনে আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় নেই, কাজেই দুটো কাজ একসঙ্গে করার চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা। এই যেমন- একসঙ্গে প্যাডাল মেরে ব্যায়াম করা এবং পত্রিকা পড়া। দুটো কাজই নিখঁতভাবে করতে পারি। এটা একসঙ্গে একাধিক কাজ করার খুবই বাস্তববাদী কৌশল।”

বিল গেট্স বলেছেন, “এখন যেহেতু তার পরিবার রয়েছে, কাজেই রাতভর কাজ করা আর সম্ভব নয়। ঘুমানোর জন্য আলাদা বিশেষ কোনো সময় নেই তার। ফাঁক পেলে তাৎক্ষনণকভাবে ঘুমিয়ে ঝেড়ে ফেলেন ক্লান্তি।”

বিল গেট্স বলেছেন:

”যারা প্রতিদিন রাতে তিন-চার ঘন্টা করে ঘুমান, তাদের আমি ঈর্ষা করি। কারণ তারা কাজ করার প্রচুর সময় পান। বেশি করে শিখতে পারে। খেলতে পারে।”

বিল গেট্স এর কাজের ধরন সরাসরি এবং সাদাসিধা। কোম্পানির শুরু থেকে তিনি একভাবে কাজ করে আসছেন। সেকেলে রীতি অনুসরণ করে কোনো সেক্রেটারি রাখেন না বিল গেট্স। অবশ্য বিভিন্ন আয়োজনের জন্যে তার একজন অ্যাসিট্যান্ট বা সহকারি রয়েছে।

বিল গেট্স জানিয়েছেন :

”আমার যত ইলেকট্রনিক মেইল- সব সরাসরি চলে আসে। আমি নিজে এসব মেইলের উত্তর দিই। আমার সব মেমো এবং চিঠি নিজে টাইপ করি। আমার অফিসকক্ষের বাইরে যে প্রশাসনিক সহকারি বসেন, তার চেয়ে অনেক বেশি শব্দ টাইপ করি আমি।”

বিল গেট্স প্রতিদিন সময়টাকে ঠিকভাবে কাজে লাগাচ্ছেন কিনা, স্টিভ বলমার তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন। এতে সঠিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয় বিল গেট্স এর।

বিল গেট্স বলেছেন :

”কোম্পানির যেসব জিনিস থেকে আমি শতাংশ আয় হয়, সেসব জিনিসের প্রতি গভীরভাবে মন দিই আমি।”

সময় এবং টাকা বাঁচানোর ক্ষেত্রে বিল গেট্স এর মিতব্যয়ী স্বভাবটাই বেশি কাজ করে।

বিল গেট্স বলেছেন :

”একটা জিনিসকে ঠেলে একেবারে শেষপ্রান্ত পর্যন্ত নিয়ে যেতে পছন্দ করি আমি। এতে প্রায়ই উঁচুমানের কাজ পাওয়া যায়।”

অমর বিজ্ঞানী “এডিসন” ও তার জীবন

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

টমাস আলভা এডিসন ছিলেন একজন মার্কিন উদ্ভাবক এবং সফল ব্যবসায়ী। তার জন্ম ১৮৪৭ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি। তিনি গ্রামোফোন, ভিডিও ক্যামেরা এবং বাল্ব সহ বহু যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন। তার এসব উদ্ভাবন বিংশ শতাব্দীর জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। এবং এখনো সারা পৃথিবীতে প্রতিদিন লক্ষ্য কোটি বার তার আবিষ্কৃত জিনিস ব্যবহার করা হয়।

এডিসন ইতিহাসের অতিপ্রজ বিজ্ঞানীদের অন্যতম একজন বলে বিবেচিত হন। তার নিজের নামে ১,০৯৩টি মার্কিন পেটেন্টসহ যুক্তরাজ্যে, ফ্রান্স এবং জার্মানির পেটেন্ট রয়েছে। টেলিযোগাযোগ খাতে তার বহু উদ্ভাবনের মাধ্যমে তার অবদানের জন্য তিনি সর্বস্বীকৃত। এ ক্ষেত্রে তার আবিষ্কার গুলোর মধ্যে রয়েছে স্টক টিকার, ভোট ধারনকারী যন্ত্র, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারী, বৈদ্যুতিক শক্তি, ধারনযোগ্য সংগীত এবং ছবি। তিনি তার জীবনের শুরুর দিকে একজন টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসেবে কাজ করেছেন। বাসস্থান, ব্যবসায়-বানিজ্য বা কারখানায় বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন ও বন্টনের ধারনা এবং প্রয়োগ দুটিই এডিসনের হাত ধরে শুরু হয় যা আধুনিক শিল্পায়নের একটি যুগান্তকারী উন্নতি। নিউইয়র্কের ম্যানহাটন দ্বীপে তাঁর প্রথম বিদ্যুত কেন্দ্রটি স্থাপিত হয়। এই মহান বিজ্ঞানীর জীবনাবসান ঘটে ১৯৩১ সালের ১৮ই অক্টোবর।

এডিসনের ছোটবেলা

একজন মহান ও চিরস্মরণীয় বিজ্ঞানী, যার বিখ্যাত আবিষ্কারগুলো মানুষের জীবনযাপনে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছিল। কিন্তু জানতে কি ইচ্ছা করে না, তার ছেলেবেলা সম্পর্কে? চলুন তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠার দিনগুলোর কথা জেনে নিই।

১৮ শতকে যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও-র মিলান শহরে জন্ম নেন এডিসন। তার বাবার নাম স্যামুয়েল এডিসন ও মার নাম ন্যান্সি এডিসন। তাদের সবচেয়ে ছোট এবং সপ্তম সন্তান ছিলেন এডিসন। এডিসনের বাবা স্যামুয়েল ছিলেন কানাডা থেকে নির্বাসিত একজন রাজনৈতিক কর্মী। স্কুলশিক্ষিকা মায়ের প্রভাব অনেক বেশি ছিল এডিসনের প্রতি। অল্প বয়সেই জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কারণে শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছিলেন এডিসন। বড় হতে হতে একরকম বধির হয়ে যান তিনি। ছোটবেলায় এটার জন্য নানা সমস্যায় পড়লেও বড় হয়ে সবার কাছে আজগুবি সব গল্প বানিয়ে বলতেন। তার আজগুবি গল্পগুলোর মধ্যে একটি হলো ট্রেন দুর্ঘটনায় কানে আঘাত পাওয়ার পর থেকে কানে কম শুনা।

১৮৫৪ সালে এডিসনের পরিবার চলে যায় মিশিগানের পোর্ট হুরনে। সেখানেই স্কুলে যোগ দেন এডিসন। কিন্তু তার স্কুল জীবন তিন মাসের বেশি ছিল না। তিনি অসম্ভব মেধার অধিকারী ছিলেন। স্কুলের গন্ডিবাঁধা পড়াশুনা তাঁর নিকট একঘেঁয়েমি মনে হত। পড়াশুনায় কোনো মনোযোগ নেই, শিক্ষকদের অভিযোগ শুনে ক্ষুব্ধ হতেন। স্কুলের শিক্ষকরাও তাঁর সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন না। রেভেরেন্ড অ্যাঙ্গল নামের এক শিক্ষককে একদিন পেছন হতে ‘বোকা’ বলেছিলেন এডিসন। এতে ভীষণ ক্ষেপে যান তিনি। ফলস্বরূপ তিন মাসেই স্কুলজীবনের সমাপ্তি ঘটে এডিসনের। এর পর আর কোনদিন স্কুলে যাননি এডিসন। শিক্ষকদের এই বিরূপ আচরণ ছোট্ট এডিসনের মনে যেন খারাপ প্রভাব না ফেলে সেজন্য স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনে এডিসনের মা। তারপর থেকে তার মা-ই তার শিক্ষিকা হিসাবে কাজ করে গেছেন। তিনি বাসায় বসেই তাঁকে পড়ানো শুরু করেছিলেন।

মাত্র ১১ বছর বয়সেই বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রচুর বই পড়ে ফেলেন এডিসন। জ্ঞানচর্চায় তাঁর আগ্রহ প্রকাশ পায় ব্যাপক ভাবে। ১২ বছর বয়সে এডিসন ভাবলেন তিনি যা শিখেছেন, সেগুলোকে কাজে লাগানো উচিত। বাবা-মায়ের কাছে অনুমতি চাইলেন বাড়ির কাছে গ্র্যান্ড ট্র্যাংক রেইল রোড লাইনে পত্রিকার হকার হিসেবে কাজ করার। হকার হিসেবে কিছুদিন কাজ করার পর এ্ক সময় এডিসন জানতে পেলেন একটি ছোট ছাপাখানা যন্ত্র কম দামে বিক্রি হবে। তিনি যে সামান্য অর্থ জমিয়েছিলেন তাই দিয়ে ছাপাখানার যন্ত্রপাতি কিনে ফেললেন। এডিসন নিজেই ‘গ্র্যান্ড ট্রাংক হেরাল্ড’ নামের ছোট একটি পত্রিকা বের করা শুরু করেন। একদম নতুন তরতাজা খবর থাকায় ট্রেনযাত্রীরা এডিসনের পত্রিকা পড়া শুরু করেন। একইসঙ্গে সংবাদ সংগ্রহ করা, সম্পাদনা করা, ছাপানো, বিক্রি করা সহ সমস্ত কাজ করতেন। অল্পদিনেই তাঁর কাগজের বিক্রির সংখ্যা বৃদ্ধি পেল। লাভ হল একশো ডলার।

নানা বিষয়ে আগ্রহ থাকার কারণে এডিসন নতুন কিছু পেলেই খুঁটিয়ে দেখতেন এডিসন। একদিন এডিসন লক্ষ করলেন, একটি ছেলে রেল লাইনের উপর খেলা করছে। দূরে একটি ওয়াগন এগিয়ে আসছে। ছেলেটির সেদিকে নজর নেই। বিপদ আসন্ন বুঝতে পেরে হাতের কাগজ ফেলে দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন লাইনের উপর। আর ছেলেটি কেউ নয়। স্টেশন মাস্টারের একমাত্র ছেলে। কৃতজ্ঞ স্টেশন মাস্টার যখন এডিসনকে পুরষ্কার দিতে চাইলেন, এডিসন সে সময় টেলিগ্রাফ শেখবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কারণ স্টেশন মাস্টার ছিলেন টেলিগ্রাফ অপারেটরও। স্টেশন মাস্টার রাজি হলেন মহানন্দে। আর কয়েক মাসের মধ্যেই এডিসন টেলিগ্রাফি শেখা রপ্ত করে নিলেন। এর সঙ্গে সাংকেতিক লিপি ও তার অর্থ বুঝতে সক্ষম হলেন। ১৫ বছর বয়সে টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসেবে কাজ করা শুরু করেন এডিসন। পরের পাঁচ বছর আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করেন তিনি। এর মধ্যেই টেলিগ্রাফ এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের প্রযুক্তি নিয়ে প্রচুর লেখাপড়া ও গবেষণা করেন তিনি।

যুবক এডিসন

১৮৬৬ সালে ১৯ বছর বয়সে কেন্টাকির লুইসভিলে চলে যান এডিসন। সেখানে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের হয়ে কাজ শুরু করেন। রাতের পালায় ডিউটি থাকায় সে সময় তিনি লেখাপড়া এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করতেন। ১৮৬৮ সালে এডিসনের বাবা-মা দুজনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের দেখতে বাড়িতে ফিরে যান এডিসন। বুঝতে পারেন এখন থেকে নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে। বাড়ি থেকে এডিসন চলে যান বোস্টনে। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন কোম্পানির হয়ে কাজ শুরু করেন। সে সময় বোস্টন ছিল আমেরিকার বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম কেন্দ্র। এডিসন এই সুযোগটাকে কাজে লাগান। কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্র তৈরির কাজে হাত দেন। এভাবেই তৈরি করে ফেলেন ইলেকট্রনিক ভোটিং রেকর্ডার, যার মাধ্যমে খুব অল্প সময়েই সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা করা যেত। ধীরে ধীরে বোস্টনে এডিসনের পরিচিতি বাড়তে থাকে। তাঁর উদ্ভাবিত পণ্য মানুষ কিনতে শুরু করে এবং এডিসন আরো নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।

তিনি ১৮৬৯ সালে বোস্টনে চাকরিরত অবস্থায় একটি যন্ত্র আবিষ্কার করলেন যা দিয়ে ভোল্ট গণনা করা যায়। এই যন্ত্রের গুণাগুণ বিবেচনা করে উদ্ভাবক হিসেবে তাঁকে পেটেন্ট দেওয়া হল। আর এই পেটেন্ট এডিসনের জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এরপর বোস্টন শহর ছেড়ে চলে এলেন নিউইয়র্কে। হাতে মোটেও পয়সা নেই। খাওয়া হয়নি দুদিন ধরে। এক টেলিগ্রাফ অপারেটরের সাথে পরিচয় ঘটল। সে এডিসনকে এক ডলার ধার দিয়ে গোল্ড ইনডিকেটর কোম্পানির ব্যাটারি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। সেখানে দুদিন কেটে গেল। তৃতীয় দিন তিনি খেয়াল করলেন ট্রান্সমিটারটি খারাপ হয়ে গিয়েছে। ম্যানেজারের অনুমতিক্রমে তিনি অল্পক্ষণের মধ্যেই ট্রান্সমিটারটি মেরামত করে ফেললেন। এর ফলে তিনি কারখানার ফোরম্যান হিসেবে চাকরি পেলেন। তাঁর মাইনে ছিল ৩০০ ডলার। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি নিজের যোগ্যতা বলে ম্যানেজার পদে উন্নীত হলেন।

এডিসন ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী। একবার স্টাফোর্ড জংশনে রাত্রিবেলায় ট্রেন ছাড়ার সিগনাল দেওয়ার কাজ পেলেন। রাত জেগে কাজ করতে হত এবং দিনের বেলায় সামান্য কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিয়ে নিজের গবেষণার কাজ করতেন। এ সময় তিনি একটি ঘড়ি তৈরি করলেন যেটি আপনা থেকেই নির্দিষ্ট সময়ে সিগনাল দিত। এর পরে বোস্টন শহরে কাজ করার সময় দেখতে পেলেন অফিস জুড়ে ভীষণ ইঁদুরের উৎপাত। তিনি হঠাৎ করে একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করলেন যা সহজেই ইঁদুর ধ্বংস করতে সক্ষম। তারপর তার জনপ্রিয়তা আর কে আটকায়। এই অর্থ দিয়ে তিনি নিজের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে গবেষণার কাজে লাগাতেন।

জীবনে অভাবনীয় পরিবর্তন

গোল্ড ইনডিকেটর কোম্পানি টেলিগ্রাফের জন্য এক ধরনের যন্ত্র তৈরি করত যার ফিতের উপর সংবাদ লেখা হত। এ সময় এডিসনের মনে হল বর্তমান ব্যবস্থার চেয়ে আরো উন্নত ধরনের যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব। এজন্যে প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার। এ সময় চাকরিতে ইস্তফা দিলেন এডিসন। কয়েক মাস প্রচণ্ড পরিশ্রমের পর উদ্ভাবন করলেন এক নতুন যন্ত্র। এটি আগের চেয়ে অনেক উন্নত এবং সেই সঙ্গে এর উৎপাদন ব্যয়ও কম। তিনি এ যন্ত্রটি নিয়ে গেলেন গোল্ড ইনডিকেটর কোম্পানীর মালিকের নিকট। এতে মালিক খুশি হলেন। এডিসনকে জিজ্ঞাসা করলেন,

কত দামে সে যন্ত্রটি বিক্রি করবে?

এডিসন দ্বিধান্বিতভাবে বললেন,

যদি পাঁচ হাজার ডলার দাম বেশি হয়, আবার তিন হাজার ডলার খুব কম হয় তবে কোম্পানী স্থির করুক তারা কি দামে যন্ত্রটি কিনবে।

কোম্পানীর মালিক এডিসনকে চল্লিশ হাজার ডলার দিয়ে বললেন,

আশা করি আপনাকে আমরা সন্তুষ্ট করতে পেরেছি।

এডিসন তো হতবাক! এই প্রচুর অর্থ বিজ্ঞানী এডিসনের জীবনে এক অভাবনীয় পরিবর্তন এনে দিল। এতদিন তিনি অন্যের অধীনস্থ হয়ে কাজ করতেন। সেখানে তাঁর স্বাধীনতা ছিল না। এবার কয়েক মাসের চেষ্টায় নিউজার্সিতে তৈরি হল তাঁর কারখানা। তিনি সেখানে দিবারাত্রি কাজ করতেন। রাত্রে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতেন। এ কারখানাটি ছিল প্রকৃতপক্ষে একটি গবেষণাগার। কয়েক বছরের মধ্যেই এডিসন প্রায় ১০০টির বেশি নতুন উদ্ভাবন করে তার পেটেন্ট নিলেন। এগুলি বিক্রি করে পেলেন প্রচুর অর্থ।

এডিসন এবার নিজের কারখানায় কাজ করতে করতে পুনরায় আকৃষ্ট হলেন টেলিগ্রাফির দিকে। অল্পদিনেই তৈরি হল ডুপ্লেক্স টেলিগ্রাফ পদ্ধতি। এর সাহায্যে দুটি বার্তা একই সাথে একই তারের মধ্যে দিয়ে দুই দিকে পাঠানো সম্ভব। এরপরে একই সময়ে একই তারের মধ্যে দিয়ে একাধিক বার্তা প্রেরণ করতে সক্ষম হলেন। আর এই পদ্ধতির সাহায্যে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার যে শুধু অসাধারণ উন্নতি হল তাই নয়, বরং খরচও কয়েকগুণ হ্রাস পেয়ে গেল।

তিনি ১৮৭৬ সালে তাঁর নতুন কারখানা স্থাপন করলেন মেনলো পার্কে। এখানে একদিকে তাঁর গবেষণাগার অন্যদিকে কারখানা। এই মেনলো পার্কে বিজ্ঞানী এডিসনের প্রথম উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার টেলিফোন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল আবিষ্কার করেছিলেন টেলিফোন, কিন্তু ব্যবহারের ক্ষেত্রে বহুবিধ সমস্যা দেখা গিয়েছিল। এডিসন কয়েক মাসের চেষ্টায় তৈরি করলেন কার্বন ট্রান্সমিটার। আর এর সহায়তায় গ্রাহকদের প্রতিটি কথা স্পষ্ট এবং পরিষ্কারভাবে শোনা গেল। চতুর্দিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়ল এডিসনের। এডিসন দীর্ঘদিন মানুষের শ্রবণ যন্ত্র নিয়েও কাজ করেছিলেন।

আলো জ্বালানোর পথে এডিসন

তিনি স্থির করলেন ইলেকট্রিক কারেন্টকে কাজে লাগিয়ে আলো জ্বালাবেন। সে সময় এক ধরনের বৈদ্যুতিক আলো ছিল কিন্তু তা ব্যবহারের উপযোগী ছিল না। প্রথমেই তিনি এমন একটি ধাতুর সন্ধান করেছিলেন যার মধ্যে কারেন্ট প্রবাহিত করলে উজ্জ্বল আলো বিকিরণ করে। তিনি বিভিন্ন রকমের ধাতু নিয়ে ১৬০০ রকমের পরীক্ষা করলেন। অবশেষে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তৈরি করলেন কার্বন ফিলামেন্ট। তিনি শুধু বাল্বের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন। এরপর সমগ্র বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনে তৎপর হলেন। তিনি তৈরি করলেন নতুন এক ধরনের ডাইনামো, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার জেনারেটর থেকে শুরু করে ল্যাম্প তৈরি করা প্রভৃতি। নিউইয়র্কে প্রথম বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র গড়ে উঠল যার অগ্রনায়ক ছিলেন বিজ্ঞানী এডিসন।

এবার এডিসন তাঁর বিখ্যাত মেনলো পার্ক ছেড়ে ওয়েস্ট অরেঞ্জে চলে এলেন। ১৮৪৭ সালের ঘটনা। এসময় তিনি শব্দের গতির মতো কীভাবে ছবির গতি আনা যায় তাই নিয়ে শুরু করলেন ব্যাপক গবেষণা। মাত্র দু’বছরের মধ্যে উদ্ভাবন করলেন কিনেটোগ্রাফ, যা গতিশীল ছবি তোলবার জন্য প্রথম ক্যামেরা। ১৯২২ সালে এডিসন আবিষ্কার করলেন কিনেটোফো যা সংযুক্ত করা হয় সিনেমার ক্যামেরার সাথে। এরই ফলে তৈরি হল সবাক চিত্র।

বিভিন্ন আবিস্কার

সে সময় নতুন আবিষ্কার হওয়া টেলিগ্রাফ যন্ত্রের একটা ত্রুটি ছিল। বহু দূরের দুই টেলিগ্রাফ কেন্দ্রের মাঝখানে যে কেন্দ্রগুলি ছিল সেগুলি আর দিক থেকে পাঠানো খবর গ্রহণ করতে ও তাতে পরিবর্তন করতে পারত। ফলে গোপনীয়তা বলতে কিছু থাকত না। এডিসন এই ত্রুটিটি ঠিক করে দিয়েছিলেন। সে কালে টেলিগ্রাফ যন্ত্রের একটি তার দিয়ে একটি খবরই পাঠানো যেত। এডিসন এক সঙ্গে অনেকগুলো খবর বিকৃতি ছাড়া পাঠানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। টেলিগ্রাফ সম্পর্কিত গবেষণা করতে করতে তিনি পাশাপাশি আরও কয়েকটি নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এ রকমই একটি যন্ত্রের নাম ‘রেমিংটন টাইপরাইটার’।

কিছু দিন পর আবিষ্কার করেন ‘মিমিওগ্রাফ’ নামের একটি যন্ত্র। এটি দিয়ে টাইপরাইটার বা হাতে লেখা চিঠি যত ইচ্ছা তত কপি করা যায়।

তিনি আবিষ্কার করেন ‘ফনোগ্রাফ’ নামক যন্ত্রটি। একটি ডায়াফ্রেমের সামনে কথা বললে সেটি কাঁপতে থাকে। এই কাঁপুনি একটি সুইচ দ্বারা নীচে রাখা ঘুর্ণায়মান মোমের সিলিন্ডারে দাগ ফেলতে থাকে। পরে সিলিন্ডারটি আবার প্রথম থেকে ঘোরালে ডায়াফ্রেমে পূর্বে উচ্চারিত কথাগুলো স্পষ্ট শোনা যায়। আধুনিক সিডি প্লেয়ারের এই প্রাথমিক ও সরল যন্ত্রটি আবিষ্কার করতে এডিসনকে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল।

এডিসনের সব চেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী আবিষ্কার হল বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার। আকাশের বিদ্যুতকে মানুষ তখন ব্যাটারিতে আটকাতে পেরেছিল। তার পরও কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি যে তা থেকে আলো পাওয়া সম্ভব। এডিসন নিজ মেধা ও প্রচেষ্টায় সেই অলৌকিকতাকে বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন। ১৮৭৯ সালে অক্টোবর মাসে তিনি স্থানীয় পার্ক বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করে সকলকে অবাক করে দিয়েছিলেন। আধুনিক যুগের সিনেমার আবিষ্কারকও ছিলেন তিনি। ১৮৯৭ সালের ২৭ এপ্রিল নিউইয়র্কে হাজার হাজার দর্শকের সামনে এডিসন তাঁর ‘কাইনেটোস্টোপ’ নামক যন্ত্রের সাহায্যে চলমান ছবি দেখিয়েছিলেন। শিল্প জগতে জন্ম দিয়েছেন নতুন একটি যুগের। তিনি সিমেন্ট, আধুনিক সহজে বহনযোগ্য ব্যাটারি, রাবার ইত্যাদি আবিষ্কার করেছেন।

পেটেন্ট অফিস থেকে জানা যায় এডিসন তাঁর সারাজীবনে মোট ১৪০০ যন্ত্রের জন্য পেটেন্ট নিয়েছেন। এ থেকেই তাঁর প্রতিভার বিস্তৃতির পরিমাপ আন্দাজ করা যায়। তিনি অনেক আবিস্কারের পথপ্রদর্শন করে গেছেন। নিজে চেষ্টা করে যদিও তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন, তবুও পরবর্তীতে তাঁর ধারণাকে পুঁজি করেই এসব তৈরি করা হয়। নিচে সেরকম কতগুলো চেষ্টার কথাই তুলে ধরা হলোঃ

উল্কি যন্ত্র

১৮৭৬ সালে এডিসনের আবিষ্কৃত একটি যন্ত্রকে বলা যায় আধুনিক উল্কিযন্ত্রের পূর্বসূরি। অবশ্য তাঁর উদ্দেশ্য ছিল চিকন সুচ দিয়ে কাগজে ছাপার ব্যবস্থা করা। ১৮৯১ সালে স্যামুয়েল ও’রেলি প্রথম উল্কি আঁকার যন্ত্রের পেটেন্ট নেওয়ার পর এডিসনকে নকলের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। লোকের ধারণা ছিল যন্ত্রে আঁকা উল্কি অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। তাই রেলির কাছে সবসময় উল্কিপ্রেমীদের ভিড় লেগেই থাকত। ও’রেলির সঙ্গে এডিসনের সাক্ষাৎ হয়েছিল কিনা জানা যায়নি। তবে এক বীমা কোম্পানির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ছক্কার ঘুঁটির মত পাঁচ ফোটার একটি উল্কি ছিল তাঁর বাম কব্জিতে।

লোহা নিষ্কাশক

১৮৯০ সালের দিকে খনি থেকে নিষ্কাশন করা লোহার মূল্য ধাই ধাই করে বাড়ছিল। চুম্বক ব্যবহার করে অপদ্রব্য থেকে লোহা আলাদা করার কথা ভাবলেন এডিসন। ১৪৫টি খনিতে প্রবেশ করার অনুমতি নিলেন। প্রচুর পয়সা ঢাললেন একটা যন্ত্র তৈরির পেছনে। কিন্তু কিছু কৌশলগত গোলযোগে সব চেষ্টা বিফলে গেল। ততদিনে লোহার মূল্য পড়তির দিকে। বাধ্য হয়ে গবেষণা থামিয়ে দিলেন মাঝপথে। তবে তাঁর দেখানো পথ ধরে এখন বৈদ্যুতিক চুম্বক ব্যবহার করে ওই কাজ করা হচ্ছে।

বৈদ্যুতিক মিটার

বিদ্যুতের মিটার কোথায় নেই! আর ওটাও এসেছে এডিসনের মাথা থেকে। বিদ্যুতের যথেচ্ছ ব্যবহার ঠেকাতে এডিসনই প্রথম তৈরি করেন মিটার। এতে দুটি দস্তার পাত জিংক সালফেট দ্রবণে ডোবানো থাকত। বিদ্যুৎ ব্যবহারের হার অনুযায়ী এক পাতের দস্তা গলে অন্য পাতে জমা হতো। মাসের শেষে পাতটি ওজন করে বের করা হত ব্যবহারের পরিমাণ।

ফল সংরক্ষণ

বাতি আবিষ্কারের পথে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন করেছিলেন এডিসন। বায়ুশূন্য টিউব নিয়ে গবেষণা চালাতে গিয়ে মাথায় আসলো ফলমূল সংরক্ষণের উপায়। তিনি বললেন,

‘টিউবে পচনরোধী তরলে মৌসুমি ফল ও শাকসবজি রেখে ভেতরের বায়ু টেনে বের করে নিতে হবে। তারপর টিউবের মুখ বন্ধ করে রেখে দেওয়া যাবে বহুদিন।’

ব্যাটারিচালিত গাড়ি

গাড়ির চাকা ঘোরাতে এডিসন ব্যাটারির শক্তি ব্যবহারের কথা ভেবেছিলেন। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যাটারিও বানিয়ে ছিলেন। তবে তিনি এমন এক ব্যাটারি বানাতে চেয়েছিলেন যা একবার চার্জ করলে একশ মাইল নির্বিঘ্নে চলতে পারে। কিন্তু ১০ বছর চেষ্টা শেষে রণে ভঙ্গ দিলেন, কেননা ততদিনে গ্যাসোলিন জ্বালানি সবার নাগালে আসতে শুরু করেছে। তাঁর পরিশ্রম একেবারে বৃথা যায়নি। সিগন্যাল বাতি বা খনিতে বহনযোগ্য আলো জ্বালাতে ওই ব্যাটারি কাজে লেগে গেল। একসময় এডিসনের ব্যাটারি সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসাতেও পরিণত হয়।

কনক্রিট বাড়ি

আলো ঝলমলে জীবনের পাশাপাশি বিশ্ববাসীকে উপহার দিতে চেয়েছিলেন কম দামে নিরাপদ ঘর। উপাদান হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন কনক্রিট, গড়ে তুললেন এডিসন সিমেন্ট কম্পানি। তাঁর ফর্মুলায় বাড়ি বানানোর প্রক্রিয়াটাও সহজ। কাঠ দিয়ে ফাঁপা কাঠামো গড়ে মাঝে ঢেলে দিতে হবে কনক্রিট। কয়েকদিন পরে জমাট বাঁধলে কাঠ সরিয়ে নিলেই হলো। পদ্ধতিটা খুব একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। দক্ষ কারিগরের অভাব যেমন ছিল, তেমনি বাড়িগুলোও অতটা দৃষ্টিনন্দন হতো না। তবে এখন অহরহ ব্যবহৃত হচ্ছে তাঁর সেই কৌশলের আধুনিক সংস্করণ।


টেকসই আসবাব

কনক্রিটের ভূত ভালোভাবেই ঢুকেছিল এডিসনের মাথায়। তা না হলে আসবাব গড়তেও সবার আগে কনক্রিটের চিন্তা আসবে কেন? যুক্তি ছিল, ওজন একটু বেশি হলেও এ আসবাবের গ্যারান্টি আজীবনের। মাত্র দুই’শ ডলারে গ্রাহকের ঘর সাজিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। ১৯১১ সালে বাথটাব, পিয়ানো ও কেবিনেট তৈরি করে প্রদর্শনীর জন্য পাঠান নিউইয়র্কে। টেকসই আসবাবের শক্তি পরীক্ষায় বহনকারী কর্মীদের ওপর নির্দেশ ছিল, যেভাবে খুশি খামখেয়ালিপনায় আসবাব বহন করা যেতে পারে। কিন্তু প্রদর্শনীর দিন এডিসনকে কোথাও দেখা গেল না। কথিত আছে, জিনিসগুলো সে যাত্রায় টিকতে পারেনি।

কথা বলা পুতুল

গ্রামোফোনের পেটেন্ট নেওয়ার পর এর বহুমুখী ব্যবহারের চিন্তা করেছিলেন। এরপর বানালেন কথা বলা পুতুল। পুতুলের শরীরে বসানো হতো খুদে গ্রামোফোন, হাত-পা জোড়া হতো আলাদাভাবে। যুক্তরাষ্ট্রের ছোট্ট মেয়েদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কারখানায়। তাদের মর্জিমাফিক গান-কবিতা রেকর্ড করে সরবরাহ করতেন। রেকর্ডিং তখন সবে প্রাথমিক পর্যায়ে। পুতুলের ভেতরে গান বাজত কখনো প্রায় নিঃশব্দে, কখনো বিকট ঘড় ঘড় শব্দে। বাজখাই স্বরের পুতুলগুলো শিশুরা মোটেও ভালোভাবে গ্রহণ করেনি।

জনপ্রিয়তা প্রাপ্তি

১৯২১ সালে তাঁর ৭৫ বছর পূর্ণ হয়। নিউইয়র্কের টাইমস পত্রিকা আমেরিকার মধ্যে সব চাইতে জনপ্রিয় ব্যক্তি কে, তা যাচাইয়ের জন্য একটি সমীক্ষা করে। ফলাফল অনুসারে দেখা যায় সব চাইতে জনপ্রিয় ব্যক্তি টমাস আলভা এডিসন। ফ্রান্সে তাঁকে দেওয়া হয় ‘কমান্ডার অব লিজিয়ন অনার’ উপাধি, ইতালিতে তাকে ‘কাউন্ট’ উপাধি দেওয়া হয়। তাঁর নিজ দেশ আমেরিকায় তিনি দেশসেবার জন্য স্বর্ণপদক সহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন, ভূষিত হয়েছেন বহু সম্মানজনক উপাধিতে। সরকার এডিসনের ছবি ও তাঁর আবিষ্কৃত প্রথম বৈদ্যুতিক বালবের ছবি দিয়ে ডাকটিকিট বের করেছিল। তিনি পৃথিবীতে রেখে গেছেন অসংখ্য আবিষ্কার যা তাঁকে চিরকাল স্মরণীয় করে রাখবে।

চলুন, এডিসনের জীবনের কিছু স্মরণীয় ঘটনা সম্পর্কে জেনে নিই

১০ বছর বয়সেই প্রথম গবেষণাগার

ছোটবেলা থেকেই এডিসন আসেপাশের জগৎ নিয়ে খুব আগ্রহী ছিলেন। ৯ বছর বয়স থেকেই তিনি বাড়িতে ছোটখাটো পরীক্ষা শুরু করেন। বাসা থেকে তাঁকে যে টাকা দেওয়া হতো তার সবই খরচ করতেন বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ কেনায়। এই অমূল্য রাসায়নিক পদার্থগুলো নিয়ে সবসময় সচেতন থাকতেন তিনি। এগুলোকে ‘বিষ’ হিসেবে চিহ্নিত করে রাখতেন, যেন মানুষ এগুলো থেকে দূরে থাকে। মাত্র ১০ বছর বয়সেই টমাস তাঁর বাড়ির নিচে নিজের একটি পরীক্ষাগার তৈরী করে ফেলেছিলেন।

সমস্যা, না আশীর্বাদ?

এডিসন কানে কিছুটা কম শুনতেন। কেউ কেউ বলতেন এক কন্ডাক্টর তাঁকে একবার কষে চড় মেরেছিলো বলে এই অবস্থা। আবার কেউ বলেন, এটি জিনগত সমস্যা; কেননা এডিসনের বাবারও একই সমস্যা ছিল। তবে সমস্যাটির কারন যাই হোক না কেন, এর ফলে কিন্তু এডিসন গভীর মনযোগ দিয়ে কাজ করতে পারতেন। বাইরের শব্দ কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারতো না। এডিসন ছিলেন কাজপাগল মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিজের মত কাজ করতে পছন্দ করতেন তিনি। ফলে এই সমস্যাটি তাঁর জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

প্রথম চাকরি হারানোর কারণ

১৪ বছর বয়সে ওয়েসটার্ন ইউনিয়েনর টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন আলভা। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধার্থে দিনের শিফট পরিবর্তন করে ডিউটি নেন রাতে। কিন্তু একবার ব্যটারিতে সালফারিক এসিড দিয়ে পরীক্ষা করার সময় দুর্ভাগ্যবশত অফিসে আগুন লেগে যায়। ফলে চাকরি ছাড়তে হয় তাঁকে।

প্রথম আবিষ্কারে ব্যর্থতা প্রাপ্তি

২২ বছর বয়সে ভোট রেকর্ডিং মেশিন এর জন্য টমাস তাঁর প্রথম স্বত্ত্বাধিকারটি পান। এটি তিনি তৈরী করেছিলেন প্রশাসনের জন্য। এতে আইনসভার প্রত্যেক সদস্যের একবার করে সুইচ টিপে প্রদত্ত কাগজে ভোট সংরক্ষণ করার কথা। কিন্তু তারা এটিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারেননি। সদস্যরা বারবার ভোট পরিবর্তন করায় মেশিনটি তাদের ভোট সংরক্ষণ করতে পারেনি। ফলে পরিচালনা পর্ষদের প্রধান মেশিনটি বাতিল করেন। এতে করে টমাসের স্বত্ত্বাধিকারও বাতিল হয়ে যায়।

গোপন সাংকেতিক ভাষা

প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর দু’বছর পর এডিসনের পরিচয় হয় মিনা মিলার সাথে। তাঁদের দু’জনই প্রথম দেখায় একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। এক সাথে সময় কাটাতে থাকেন দু’জন। এমনকি মিনাকে আলভা শিখিয়ে দেন মোর্স নামের গোপন সাংকেতিক ভাষাটিও। অনেক মানুষের মধ্যে থাকলে তাঁরা নিজেদের মধ্যে এই সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করতেন। এরপর একদিন আলভা মিনাকে প্রস্তাব জানালেন . – — ..- .-.. -.. -.– — ..- — .- .-. .-. -.– — . এবং মিনা উত্তর দিলেন -.– .। এর পরপরই তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যাপারটা মজাদার না?

রহস্যময় ট্যাটু

মিউচুয়াল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নিবন্ধন অনুসারে আলভার বাম বাহুতে পাঁচটি ফোটা বিশিষ্ট একটি ট্যাটু ছিল। এই রহস্যময় ট্যাটু সম্পর্কে কেউ জানতো না। প্রথম যে ট্যাটু মেশিনটি আলভা আবিষ্কার করেন, সেটি স্টেনসিল কলমের সাহায্যে কাজ করতো। ১৮৭৬ সালে তিনি এর স্বত্বাধিকার পান। পরবর্তীতে স্যামুয়েল রেইলি এই ট্যাটু মেশিনটিকে কিছুটা পরিবর্তন করে নিজেকে ট্যাটু মেশিন এর আবিষ্কারক বলে দাবি করার চেষ্টা করেন।

হতবাক এডিসন

আধুনিক ফ্লোরোস্কোপ উদ্ভাবন করতে গিয়ে এক্স-রে ব্যবহার করেন টমাস। এই ফ্লোরোস্কোপ হাসপাতালে ব্যবহৃত হতো। সেই সময় এক্স-রেকে অনিরাপদ ভাবা হতো না। এডিসন তার সহযোগী ক্ল্যারেন্স ড্যালিকে একটি ফ্লোরোস্কোপ তৈরীর নির্দেশ দেন। ড্যালি নিজের হাতের উপর এক্স-রে পরীক্ষা করেন। এতে করে তার হাতে ক্ষত সৃষ্টি হয়। হাত নিয়ে অনেক ভোগান্তির পর মারা যান ড্যালি। ড্যালির মৃত্যু তাঁকে হতবাক করে দেয়। তিনি এক্স–রে নিয়ে আর গবেষণা না করার সিদ্ধান্ত নেন।

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হাতি

১শ’টি পাওয়ার স্টেশনের মাধ্যমে এডিসন আমেরিকাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতেন। এসি তড়িৎ প্রবাহের চেয়ে ডিসি তড়িৎ প্রবাহকে বেশি সমর্থন করতেন। ঘটনাক্রমে সে সময় সারকাসের একটি হাতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। এতে কিছু মানুষ মারা যায়। পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেলে সারকাস কর্তৃপক্ষ হাতিটিকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। এডিসন এরকম নৃসংশতার বিরুদ্ধে থাকলেও তিনি এই সুযোগটিকে কাজে লাগান। তিনি ৬ হাজার ভোল্ট এসি তড়িৎ ব্যবহার করে হাতিটিকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করেন এবং দেখান যে, ডিসি-তড়িৎ এসি-তড়িতের চেয়ে নিরাপদ।
 
অনেক তো জানলেন এডিসনের জীবন কাহিনী। এবার বিদায়ের পালা এসে গেল। টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে অন্য কোন বিষয় নিয়ে